এফএনএস স্পোর্টস: ‘যদি তুমি চিন্তা করো তাহলে একদিন না, একদিন সেটি হবে। আর যদি তুমি চিন্তা না করো তাহলে সেটি কোনোদিন হবে না।’ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন কথায় বিশ্বাস করে পুরো বিশ্ব। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ক্রীড়াঙ্গনের কেউ না হলেও তার হাত ধরে বদলে গেছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। প্যারিসে হচ্ছে অলিম্পিকের এবারের আসর। এই অলিম্পিক সফলতার মুখ দেখেছে ড. ইউনূসের হাত ধরে। এমনকি ২০২৬ সালে বসতে চলা মিলান অলিম্পিকেও রয়েছে তার সংশ্লিষ্টতা। ফুটবল অঙ্গনেও পরিচিত মুখ বাংলাদেশের এই নোবেলজয়ী। ‘মানুষ একজন যোদ্ধা, মানুষ একজন আবিষ্কারক’ ড. ইউনূসের এমন কথাও প্রভাব ফেলেছে সারা বিশ্বে। মূলত খেলা জগতে ‘সোশ্যাল বিজনেস’ মডেলের মাধ্যমে পরিচিতি অর্জন করেছেন তিনি। মুনাফার পরিবর্তে মানবকল্যাণ করাই সোশ্যাল বিজনেসের প্রধান লক্ষ্য। এর আগে ‘মাইক্রো ক্রেডিট’ বা ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল ড. ইউনূসের। সেখান থেকে গড়ে তোলা হয় গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ধারণা প্রবর্তনের জন্য ২০০৬ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তার হাত ধরে স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা নিজেদের ব্যবসায়িক ধারণায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়। ২০১৬ সালে ক্যাম্প ন্যুতে ভ্রমণ করে ড. ইউনুস বলেছিলেন,’বাংলাদেশের সকলেই ফুটবলকে খুব ভালোবাসেন। আমি অতীত, বর্তমানের খেলোয়াড়দের নাম না জানলেও তারা সবকিছু জানেন। কে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন, কে করেছেন সবকিছু তারা বলতে পারেন। এটাই মূলত একটি অভাবনীয় বিষয় কীভাবে মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে এই খেলা। খেলাকালীন সকলে পর্দার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন, সবকিছু দেখেন। আর এটাই ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা যায়। মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের বার্তা, ঘনিষ্ঠ হওয়ার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যায়।’ সে সময়ে বার্সার সহ-সভাপতি কার্ডোনার বলেছিলেন, ‘আমরা অধ্যাপক ইউনূসের থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করছি।’ ২০১৮ সালে আরও একবার বার্সেলোনায় গিয়েছিলেন তিনি। সে সময়ে লিওনেল মেসি-জেরার্ড পিকেরাও ছবি তুলেছিলেন ড. ইউনূসের সঙ্গে। এর এক বছর আগে ২০১৭ সালে ড. ইউনূসের দেখানো পরিকল্পনা দিয়ে ফ্রান্সের অলিম্পিক আয়োজন নিশ্চিত হয়। তখন থেকেই তিনি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেন। প্যারিসের একটি অনুন্নত অঞ্চল বেছে নেন অলিম্পিক ভিলেজ গঠনের জন্য। তার পরিকল্পনা ছিল বৈশ্বিক এই আয়োজনের মাধ্যমে অঞ্চলটির উন্নয়ন ঘটানো এবং কর্মসংস্থান তৈরি করা। এছাড়া পরিবেশের কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিটি ঘর ও স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেল পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। আয়োজন শেষ হলে সমস্ত ঘর দরিদ্র মানুষ ও শিক্ষার্থীদের কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রেখেছেন ড. ইউনূস। তার এমন অভাবনীয় কাজের কারণে মিলান অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ সাহায্যের জন্য নোবেলজয়ীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। কেবল এই পরিকল্পনা নয়, ইতিবাচকভাবে উপার্জনের রাস্তাও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ড. ইউনূস কাজ করেছেন। এবার তার হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগলে সেটি হবে বড় পাওয়া। এক সময়ের জনপ্রিয় ফুটবল এখন নেই। আবাহনী-মোহামেডানের দ্বৈরথও টানে না মানুষকে। ক্লাবগুলোকে ভাড়া করে লোক নিতে হয় মাঠে। বিশ্বক্রীড়াঙ্গনে যার হাত ধরে জয়জয়কার ধ্বনি শোনা যায়, এবার তার হাত ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গন কতটুকু আগাতে পারে সেটিই এখন সময়ের অপেক্ষা।