এফএনএস: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ন্যায্য অধিকারের দাবিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি করে শিক্ষার্থীদের হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার করা হবে। বিদেশে পালিয়ে থেকে যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন, গণহত্যার দায় থেকে তারা রক্ষা পাবে না। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে যাওয়ার পথে নীলফামারীর সৈয়দপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, এই বাংলার মাটিতে তাদের শাস্তি কার্যকর করা হবে। পলাতক হাসিনা ও তার ছেলে জয় বিদেশে থেকেই এখনও নানা ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তারা পূর্বের মতোই মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত ও দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অপপ্রচার চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। পরাজিত শক্তি যেন কোনোভাবেই আমাদের বিজয়কে নস্যাৎ করতে না পারে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব অনেক। দেশবাসীও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করার পাশাপাশি নিজেরাও কোনো অরাজকতায় যেন না জড়াই। বরং সুসংগঠিত হয়ে সংখ্যালঘু ভাইদের আশ্বস্ত করে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, ১৪, ১৫ আগস্ট রাজপথে বিএনপির সব নেতাকর্মী সজাগ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘর নিরাপত্তা দেবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগকে রাজপথে মোকাবিলা করা হবে। এতে সভাপতিত্ব করেন- সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল গফুর সরকার। তার সফর সঙ্গী ছিলেন- জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম স্বপ্না। সঞ্চালনায় ছিলেন- জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহীন আকতার শাহীন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন পাপ্পু। আবু সাঈদের কবর জিয়ারত: কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাইদের কবর জিয়ারত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার দুপুর ২টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে কবর জিয়ারত করেন। জিয়ারত শেষে তিনি মোনাজাত করেন। এরপর বিএনপি মহাসচিব আবু সাঈদের বাড়িতে যান। সেখানে নিহতের বাবা মকবুল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের খোঁজ নেন। মকবুল হোসেন তার ছেলেকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ করে এখনও খুনিদের কাউকেই গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, বিএনপি সবসময় আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনর রশীদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, সাঈদ নিজের বুক পেতে দিয়ে যে ইতিহাস রচনা করেছে- তা দেশবাসীসহ সারা বিশ্বের মানুষ তাকে সবসময় মনে রাখবে। তিন-চারশ মানুষকে দিয়ে সীমান্তে নাটক সাজাচ্ছে: এর আগে গতকাল বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের কালীবাড়ির নিজ বাসভবনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর চলমান হামলা, ভাঙচুর ও জমি দখল নিয়ে আলাপকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। ঠাকুরগাঁওয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনকে পরিকল্পিত ‘গুজব’ ও সাজানো ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অর্জনকে ম্লান করতে বিদেশি চক্রের মদতে সাবেক ‘স্বৈরাচারী’ সরকার এসব ‘কূটকৌশলের’ আশ্রয় নিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে এরকম একটি ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি গোয়েন্দা ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনেছি, ৩০০-৪০০ পুরুষ মানুষ, সবার হাত খালি, সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান বা স্বজন কেউ নেই। তারা সীমান্তে গিয়ে ক্যামেরার সামনে বলছে, আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। একটি বিদেশি চক্র যারা বাংলাদেশের বিজয়কে ধূলিসাৎ করতে চায়, তারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের অলীক কাহিনি প্রচার করতে এসব নাটক সাজাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারী সরকার বিগত বছরগুলোতেও সংখ্যালঘুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় নিজেদের লোক দিয়ে এরকম নাটক মঞ্চস্থ করে গেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে যে সকল হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। কোনো ধর্মীয় ইস্যুতে এই হামলা-ভাঙচুর হয়নি। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে ধর্মীয় সহিংসতার এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি থেকে নির্দেশনা আছে, দলের কারও বিরুদ্ধে যদি এরকম কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাকে তাৎক্ষণিক দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, পৌর বিএনপির সভাপতি পয়গাম আলি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আল মামুনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।