মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪০ অপরাহ্ন

যুদ্ধবিরতির পর ঘরে ফিরছেন দক্ষিণ লেবাননের মানুষ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

এফএনএস বিদেশ : যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির মাধ্যমে গতকাল বুধবার ইসরায়েল ও ইরান—সমর্থিত হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত এই অঞ্চলের জন্য এটি একটি কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকরে দায়িত্বপ্রাপ্ত লেবাননের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজ এলাকায় ফিরে না যেতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তারা। ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে লেবাননের প্রায় ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল। গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শুরু হওয়া ইসরায়েল—লেবানন সংঘর্ষে হাজারো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এই সংঘাত অবসানে চুক্তিটি বাইডেনের প্রশাসনের শেষ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গাজায়ও একটি যুদ্ধবিরতির জন্য প্রশাসন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাইডেন। এছাড়া, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনাও রয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর স্থানীয় সময় রাত ২টায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতে গুলির শব্দ শোনা যায়। তবে এগুলো উদযাপনমূলক ছিল কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে ইসরায়েলি বাহিনী সতর্কবার্তা দিতে গুলিবর্ষণ করেছিল। এরপর দক্ষিণ লেবাননের টাইর বন্দরে গাড়ি ও ভ্যানে করে স্থানীয়দের বাড়ি অভিমুখে ফিরতে দেখা যায়। গাড়িগুলো গদি, স্যুটকেস ও আসবাবপত্রে বোঝাই ছিল। লেবাননের পতাকা উড়তেও দেখা যায় কয়েকটি গাড়িতে। যেসব গ্রামে মানুষ ফিরে যাচ্ছেন, সেগুলোর অধিকাংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবুও বিকল্প বাসস্থানে বাড়িভাড়ার চাপে অনেক পরিবার আর্থিক কষ্টে পড়েছিল। ব্যয় এড়াতে বরং বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরে যাওয়া তাদের কাছে শ্রেয়। তবে ফিরে যেতে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত ও দক্ষিণ সীমান্তবর্তী গ্রামের মাইস আল—জাবালের বাসিন্দা হুসাম আরউত জানান, পৈতৃক ভিটায় ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি অধীর হয়ে আছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলিরা পুরোপুরি সরে যায়নি। তারা এখনও সীমান্তে রয়েছে। তাই আমরা সেনাবাহিনীর ঘোষণার অপেক্ষা করছি। তারা নিশ্চয়তা দিলেই আমরা গাড়ি চালিয়ে গ্রামে ফিরে যাব। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করবে ইসরায়েল। লেবাননের সেনাবাহিনী সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় দায়িত্ব গ্রহণ করবে যাতে হিজবুল্লাহ সেখানে তাদের দল পুনর্গঠন করতে না পারে। হিজবুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও দলটির শীর্ষ কর্মকর্তা হাসান ফাদলাল্লাহ লেবাননের আল—জাদিদ টিভিকে জানান, চুক্তিটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব স¤প্রসারণে সহায়ক হবে। তিনি দাবি করেছেন, হাজার হাজার মানুষ এখন তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। তাদের নিরস্ত্র করার ইসরায়েলি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে হিজবুল্লাহ, হামাস ও হুথিদের সমর্থন দেওয়া ইরান। লেবাননের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লাহ বোউ হাবিব এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। হাবিব বলেছেন, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সময় দক্ষিণ লেবাননে অন্তত ৫ হাজার সেনা মোতায়েন করা হবে। এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করবেন তবে হিজবুল্লাহ এটি লঙ্ঘন করলে যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। তবে হিজবুল্লাহ এই সংঘাতের শুরুতে যে অবস্থায় ছিল তার তুলনায় অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি বলেছেন, হিজবুল্লাহকে কয়েক দশক পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের শীর্ষ নেতাদের হত্যা ও হাজারো সদস্যকে নিষি্ক্রয় করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তাদের দলীয় কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com