জিএম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে: বিতর্কিত ইভিএম নির্বাচনে ব্যবহার না করা ও এই প্রথা বাতিল করা, দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদে না থাকার বিধান যুক্ত করে তা বাস্তবায়ন করা এবং তত্বাবধায়ক প্রথা পুনবর্তনের দাবিসহ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ জানিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব দিচ্ছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত সংবলিত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিয়েছে। দলগুলোর প্রস্তাবনায় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের পদক্ষেপ গ্রহণ, তৃণমূলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্প্রতি ও সৌহার্দ্য সমুন্নত রাখতে বিদ্যমান দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন প্রথা বাতিল করা, ভোটার তালিকা থেকে মৃত ও বিতর্কিত ভোটারদের বাদ দিয়ে নিভূর্ল তালিকা প্রয়োজনের ব্যবস্থা করা এবং কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যোগ্যদের বাছাই করে নির্বাচন পরিচালনা অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটানিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা। গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংস্কার কমিশনের কাছে নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও কমিশনকে জবাবদিহিতার আওয়তায় আনতে ২২টি প্রস্তাবনা দিয়েছে। দলটির সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পাওয়ার স্বাক্ষরিত এই প্রস্তাবনাটি নির্বাচন ভবনে জমা দিয়েছে। শুরুতে দলটির প্রস্তাবনায় বলেছে, অবাধ, সুষ্ঠূ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুর্নবহাল করা। আসন্ন এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাস্তব প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকলের ঐক্যমত্য ও সমন্বিত উদ্যোগের ভিত্তিতে বর্তমান অন্তবর্তীকালিন সরকারকে সংশ্লিস্ট সকলের ঐক্যমত্য ও সমন্বিত উদ্যোগের ভিত্তিতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধয়াক সরকার হিসেবে আইনী বৈধতা দিয়ে সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সৎ, দক্ষ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা এবং প্রয়োজনে সংখ্যা বাড়ানো। নির্বাচনের স্বচ্ছতার প্রশ্নে জনগণের আস্থা বজায় রাখার নির্মিত্তে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ও বহুল বিতর্কিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতি বাতিল করা। জাতীয় সংসদে অধিকতর দল ও মতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ সংসদকে অধিকতর প্রতিনিধিত্বমূলক করার উদ্দেশ্যে, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (প্রোপোশনাল রিপ্রেজন্টেশন—পিআর) প্রথা চালু করা। নতুন নেতৃত্ব তৈরির প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত বা ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে দুই বারের বেশি কোন ব্যাক্তিকে প্রধানমন্ত্রী/রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ না রাখা। তৃণমুল পর্যায়ে আবহমানকাল ধরে চলে আসা সামাজিক ঐক্য অক্ষুন্ন রাখার জন্য স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে বিদ্যমান দলীয় প্রতীকের বিধান বিলুপ্ত করা। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন বাতিল করা। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শগ্রহণের বাধ্যবাধকতা না রাখা এবং নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে রাষ্ট্রপতির আদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা এবং বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করা। নির্বাচনে অনিয়ম হলে আংশিক কিংবা সম্পূর্ন নির্বাচন বাতিল করার সংক্রান্ত আরপিও’র ৯১(ক) অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা। ইসলামী আন্দোলনের ১৪টি প্রস্তাবের মধ্যে নির্বাচনের ঝঁুকিপূর্ণ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা, ভোটগ্রহণের পূর্বে ভোটকেন্দ্রের মোট ব্যালট পেপার, তার ক্রমিক নম্বর, শূন্য ব্যালট বাক্স সকল দলের পোলিং এজেন্ট এবং সাংবাদিকদের সামনে প্রকাশ করা। ভোটের সুষ্টু পরিবেশ বিনষ্টকারী, জালভোট প্রদানকারী এবং নির্বাচন পরিচালনার কাজে নিয়োজিত কেউ পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আইন করা, যাতে ভবিষৎতে আর কেউ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট করার সাহস না পায়। এছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে সর্বোচ্চ আদালত কতৃর্ক নির্বাচনকালিন পর্যবেক্ষক রাখা এবং ইসিকে এমন ক্ষমতা দেয়া হবে, যে কোন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতাকর্মী দুর্নীতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মানবতাবাদী অপরাধে লিপ্ত হয় তাহলে কমিশন তাদের দলীয় নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে আরপিও’তে এমন শক্ত বিধান যুক্ত করা। আর বাংলাদেশ সমমনা জোটের ২১ প্রস্তাবনার মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনিদিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা, অর্থপাচার রোধ ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে শে^তপত্র প্রকাশ এবং সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করা, দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত করা ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে আন্তজার্তিক সীমান্ত আইন বাস্তবায়ন করা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা—কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরও যেনো নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন এ সংক্রান্ত আইনের কঠোর বিধান যুক্ত এবং বেআইনি ঘোষণা করা। আর খেলাফত মজলিশও দেড় ডজন সুপারিশ করেছে নির্বাচনী কমিশন ব্যবস্থা ও সংস্কার কমিশনের কাছে। তাদের প্রস্তাবনার মধ্যে নির্বাচনে পেশীশক্তি ও কালোটাকার ব্যবহার সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করা, ব্যয়ের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম পেলে প্রার্থিতা বাতিল এবং এমনকি নির্বাচিত হলেও তার পদ বাতিল ঘোষণা করার বিধান আইনে সন্নিবেশ করা। ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং চাকুরিজীবীদের জন্য পোষ্টার ব্যালট প্রথা সচল রাখা। এদিকে, প্রত্যেকটি দলই কয়েকটি বিষয় অভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে এর মধ্যে সংখ্যানুপাতে সংসদ গঠন (পিআর প্রথা চালু), তত্ত্বাবধায়ক পুর্নবহাল, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রীর পদে না থাকা এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ গ্রহণ এবং নির্বাচনে তাদের বিচারিত ক্ষমতা প্রদান করা।