এফএনএস এক্সক্লুসিভ: আসন্ন নতুন বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে সরকারি বই হাতে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষা কারিকুলামে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিগত সরকার নতুন কারিকুলাম চালু করেছিল। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ওই কারিকুলাম বাতিল করে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষায় ২০১২ সালের কারিকুলাম চালু করতে যাচ্ছে। আর প্রাথমিক স্তরে বিগত সরকারের আমলের কারিকুলাম বহাল থাকলেও কনটেন্টের পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন বেশ কিছু কনটেন্ট যোগও করা হয়েছে। তাছাড়া বাতিল করা হয়েছে আগের কারিকুলাম অনুযায়ী বই ছাপানোর দরপত্র। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) সব প্রক্রিয়াই নতুন করে সম্পন্ন করতে হয়েছে। এতে বড় একটি সময় চলে গেছে। ফলে বছর শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকাশক এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রাক—প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়েই বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বছরের শেষ দিকে এসে নানা পরিবর্তনের ফলে নতুন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের সব বই পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও সরকার ১ জানুয়ারি সারা দেশে বই উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আগের কারিকুলামে ফিরে যাওয়ায় এবার বেশি বই ছাপতে হবে। গত কয়েক বছর ৩২ থেকে ৩৪ কোটি বই ছাপা হলেও আগামী বছরের জন্য প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপতে হবে। তাতে কিছুটা সময় লেগে যাবে। বিগত সরকারের শাসনামলে বইগুলোয় শেখ মুজিবুর রহমানের অতিরিক্ত বন্দনা করা হয়েছিল। এবারের নতুন বইয়ে রাজনৈতিক অতিকথন ও অতিবন্দনা বাদ দেয়া হয়েছে। বিতর্কিত বিভিন্ন লেখকের লেখাও বাদ দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বই ছাপা হবে ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুযায়ী। নতুন বইয়ে স্থান পাবে জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস। তবে সময়সাপেক্ষ হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশ থেকে পলায়ন নিয়ে এবারের বইয়ে কিছু থাকবে না। বইয়ের ব্যাক কভারে এর আগে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের বিভিন্ন উক্তি থাকলেও এবার সেগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাক কভারে স্থান দেয়া হবে জুলাই আন্দোলনের দেয়াললিখন ও গ্রাফিতিগুলো। সূত্র জানায়, প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ের টেন্ডার কার্যক্রম শেষ করে ইতোমধ্যে ছাপা কাজ শুরু হয়েছে । চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির বই ছাপার জন্য টেন্ডারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতার মধ্যে যারা কাজ পেয়েছেন তাদের বাজেট চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার পর বই ছাপাতে চুক্তিবদ্ধ হবে ছাপাখানাগুলো। চুক্তির পর বিভিন্ন শর্ত মেনে তারা বই ছাপার কাজ শুরু করবে। চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর বই ছাপানোর কাজ শেষ করে ডেলিভারি পয়েন্টে পাঠাতে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৪৫ দিন দেয়া হবে। ওই হিসেবে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ করতে না পারলে মাধ্যমিকের বই সরবরাহের জন্য জানুয়ারিতেও মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় দিতে হবে। কিন্তু নানা প্রক্রিয়া শেষ করে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ছাপাখানাগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। সূত্র আরো জানায়, অতীতে কোনো বছরে দশম শ্রেণিতে বই দেয়া না হলেও এবার দশম শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীদের দেয়া হবে নতুন বই। আগামী শিক্ষাবছরে প্রাক—প্রাথমিক ও প্রাথমিকের বইয়ের উজ্জ্বলতা হবে ৮৫ জিএসএম ও ৮০ গ্রাম। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের সাদাকালো বইগুলোর উজ্জ্বলতা হবে ৮২ জিএসএম ও ৭০ গ্রাম। এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন শিক্ষাবছরের জন্য সব বই ছাপা শেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোর লক্ষ্য রয়েছে। কাজ পাওয়া ছাপাখানাগুলো অজুহাত না দেখালে ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই পাঠানো সম্ভব হবে। আর যারা চুক্তিবদ্ধ হবেন তারা ডিসেম্বরের মধ্যে বই দিতেই চুক্তিবদ্ধ হবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ বই সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে অন্যদের কাজ দেয়া হবে।