সিরিজ সমতায় শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আজ জ্যামাইকার কিংস্টনের সাবিনা পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে সফরকারী বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়। মাত্র কয়েক মাস আগে পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর থেকে হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় সিরিজ জয়ের পর টানা পাঁচ টেস্ট হেরেছে টাইগাররা। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ এবং ২০১ রানের বড় হার দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ শুরু করে টাইগাররা। পাঁচ টেস্টে বাজেভাবে হারের কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের কীর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের মূল সমস্যা হলো— ব্যাটিং। প্রতিটি ম্যাচ ব্যাট হাতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাটাররা। তবে পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে বোলারদের। ব্যাটারদের দায়িত্বজ্ঞানহীন পারফরমেন্স মাটি করে দিচ্ছে বালারদের সাফল্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেছে বোলাররা। পেসার তাসকিন আহমেদের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ঐ ইনিংসে ১৫২ রানে অলআউট হয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৬৪ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিন। ঐ ম্যাচের দুই ইনিংসেই ব্যর্থ ছিলো টাইগার ব্যাটাররা। বিশেষভাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ব্যর্থতার পরও ব্যাটারদের পক্ষে কথা বলেছেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কুঁচকির ইনজুরির কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিরাজ। প্রথম ম্যাচে লজ্জাজনক হারের পর মিরাজ বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা কয়েকটি ভুল করেছি। কিন্তু এমনটা ঘটতেই পারে। আমরা আশা করি পরের ম্যাচে আমরা ঘুড়ে দাঁড়াবো।’ সিরিজের শেষ টেস্টে ঘুড়ে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে মিরাজ জানান, সিরিজ হার এড়াতে প্রথম টেস্টের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে ভালো করতে বদ্ধপরিকর খেলোয়াড়রা। মিরাজ বলেন, ‘আমরা জানি আমরা কি ভুল করেছি এবং আমাদের আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরতে হবে। আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছি, আশা করছি পরের টেস্টে আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারবো।’ দেশ বা বিদেশের মাটিতে যেখানেই হোক তাসকিনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের পেস আক্রমণ দুর্দান্ত পারফরমেন্স করছে। তাই টাইগারদের পেস আক্রমণের প্রশংসা করতে ভুল করেননি মিরাজ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা সত্যিই ভালো বোলিং করছি। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছে তাসকিন। আমাদের একটি ভালো পেস আক্রমণ আছে। তাসকিনের সাথে হাসান ও শরিফুল ভালো বোলিং করছে। আমাদের স্পিনার তাইজুল ইসলামও আছে। প্রথম ইনিংসে সত্যিই ভালো বোলিং করেছে সে। তাদের পারফরমেন্সে আমি সত্যিই খুশি।’ ২০০৯ সালের সফরে ২—০ ব্যবধানে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে জয়ের পর ক্যারিবিয়ান দ্বীপে কখনও সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে তখন সিরিজ জিতেছিলো টাইগাররা। নিজ দেশের বোর্ডের সাথে বিরোধের কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঐ সিরিজ খেলেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের শীর্ষ খেলোয়াড়রা। সব মিলিয়ে ২১ টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরমধ্যে ১৫টিতে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের জয় চারটিতে। বাকী দুই টেস্ট ড্র হয়। দলের বেশিরভাগ সিনিয়র খেলোয়াড়দের ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান সিরিজে খেলছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক শান্ত মত ইনজুরির কারণে এই সিরিজে খেলছেন না অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে পরিবর্তন আনতে পারে বাংলাদেশ। পেসারদের মধ্যে কাউকে বিশ্রাম দিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। শরিফুলকে বিশ্রাম দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এতে একাদশে সুযোগ হতে পারে নাহিদ রানার। দুই টেস্ট শেষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে এবং টি—টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশ দল : মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মোমিনুল হক, মাহিদুল ইসলাম অংকন, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), জাকের আলি অনিক, শাহাদাত হোসেন দিপু, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, হাসান মুরাদ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল : ক্রেইগ ব্রার্থওয়েট (অধিনায়ক), জশুয়া ডা সিলভা (সহ—অধিনায়ক), আলিক আথানাজে, কেসি কার্টি, জাস্টিন গ্রেভস, কাভেম হজ, টেভিন ইমলাচ, আলজারি জোসেফ, শামার জোসেফ, মিখাইল লুইস, এন্ডারসন ফিলিপ, কেমার রোচ, জেইডেন সিলেস, কেভিন সিনক্লেয়ার, জোমেল ওয়ারিকান।