এফএনএস: জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বিষয়ে আলোচনা করতে তিনি গতকাল মঙ্গলবার ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বসেন, আজ বুধবার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বসবেন। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে বিকালে ব্রিফিংটি হয়। প্রেস সচিব বলেন, জাতীয় ঐক্য ঘোষণা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে সংলাপ করবেন। আগামীকাল (আজ বুধবার) বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন প্রধান উপদেষ্টা। পরদিন (আগামীকাল বৃহস্পতিবার) তিনি ধর্মীয় নেতাদের একটি ডায়ালগের আহ্বান করেছেন। এসব বৈঠকের উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনি ন্যাশনাল ইউনিটির ডাক দেবেন। বুধবার বিকাল ৪টায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক হবে। কোন কোন দল অংশ নেবে সেটি স্পষ্ট করে বলা হয়নি। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, কোন কোন রাজনীতি দল অংশ নেবে তা আগামীকাল (আজ বুধবার) জানতে পারবেন। ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কখন কোথায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কী বিষয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন প্রধান উপদেষ্টা এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ইদানীং কিছু ঘটনা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে অপতথ্য ছড়ানোর প্রয়াস আমরা দেখছি। অনেকাংশেই দেখছি ভারতীয় গণমাধ্যম খুবই আক্রমণাত্মকভাবে এগুলো করছে। সেটার জন্য জাতীয়ভাবে ঐক্য তৈরি করে আমাদের বলতে হবে, তোমরা আসো, দেখো কী হচ্ছে। একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় ঐক্যটাও ধরে রাখা। আমাদের দেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এখানে ইমেজের প্রশ্ন আছে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এ অপতথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে নামতে হবে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোকে আহ্বান করবো বাংলাদেশ নিয়ে যে ভয়ানক ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে তার জবাব দিয়ে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে। এটা জাতীয় দায়িত্ব বলে মনে করি। এক প্রশ্নের জবাবে গত আগস্টে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথা হয় জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, সেসময়ও ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদির কাছে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে ভারতীয় সাংবাদিকদের ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন। সেখানে তাদের অনুসন্ধান করার জন্য বলেন। সেখানে সহিংসতা হচ্ছে কিনা তা খুঁজে বের করতে বলেন। আর আমরা (প্রেস উইং) ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি বলেন, তারা তথ্য পাচ্ছে তাদের লাইকিংয়ে (পছন্দে) যারা পড়ছেন, সেটা হতে তথ্য নিচ্ছেন। অনেকক্ষেত্রে নাম ছাড়া তথ্য নিচ্ছেন। আবার তারা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ থেকেও তথ্য নিচ্ছেন। নেত্র নিউজ দেখিয়েছে তাদের তথ্যে বড় রকমের গলদ আছে। ৯ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তার কোনোটি সা¤প্রদায়িক কারণে হয়নি। মৃত্যুগুলোর পেছনে ছিল রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত কারণ। সংগঠনটি নেত্র নিউজের প্রতিবেদনের নিয়ে কোনও প্রতিবাদ জানায়নি। তারা এটাও বলেনি আমরা ঘটনাগুলো পুনরায় দেখি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, আমরা খুবই স্বচ্ছ। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনেকেই চোখ, কান, নাক বন্ধ রেখে, বধিরের মতো হয়ে থেকে বলছে, সে (ভারত) যেটাই বলছে সেটাই সত্য। আমরা বারবার বলছি কিন্তু আমাদের কথাটা শুনেও না শোনার ভাব করছে তারা। বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য চালানোর ফলাফল হলো আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলাÍ বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এটার জন্য দায় চাপাবো ভারতীয় গণমাধ্যমকে। এ গণমাধ্যম কোনও তথ্য নিশ্চিত হওয়া ছাড়া মিথ্যা অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তারা আগেই নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশে কী হচ্ছে। অবস্থান পূর্বনির্ধারিত থাকলে বেশি এগোনো যায় না। ফলে ভারতীয় জনগণ সহিংসতা করছে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানান প্রেস সচিব। ভারতীয় অপপ্রচারের বিষয়ে সরকার কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, কূটনীতিক চ্যানেলে কথাবার্তা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় এরচেয়ে বেশি করণীয় নেই। আমরা আশা করি, আমাদের সিটিজেন গ্রুপ, ডায়াসপোরা গ্রুপ, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটির বিষয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত। তারা আমাদের নিয়ে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। পুরো জাতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছে। এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তারা আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। আমরা মনে করি এ সুসম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। শেভরনের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদনের ৬০ শতাংশ শেভরনের কূপ থেকে আসে। তারা আবার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ইচ্ছে করেছেন। তারা ১০ ও ১১ ব্লকে কূপ খননের প্রস্তাব দেবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। গ্যাসের নতুন চাহিদা হচ্ছে। তারা জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গেও বসবেন।