এফএনএস: জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হাতে নিয়ে বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশের সম্পদ চৌকস কর্মকর্তাদের হত্যা করেছিল। অনেকের লাশ ড্রেনে ভাসিয়ে দিয়েছিল। অনেকের লাশ পুঁতে দিয়েছিল। অনেকের লাশ পাওয়াও যায়নি। এই হত্যাকা-ের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর সদস্যদের এনে আদর আপ্যায়ন করেছিলেন। কথিত দুটি তদন্ত কমিটি করেছিলেন। ওই তদন্ত কমিটির কথা জানার দরকার ছিল দেশের সেনাবাহিনীকেও। কারা তাদের সহকর্মীদের হত্যা করেছে, তা জানার দরকার ছিল। কিন্তু তাদের জানতে দেওয়া হয়নি। আমি সরকারকে বলবো, এই হত্যার বিচার করতে হবে। একসময় বিজিবি ছিল সীমান্তের রাইফেল, তাদের করা হয়েছে সীমান্তের চৌকিদার। গতকাল শুক্রবার কুমিল্লার টাউন হল ময়দানে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, এ দেশকে গড়তে হলে কিছু চাঁদাবাজমুক্ত হাত দরকার। কিছু দুর্নীতিমুক্ত মানুষ দরকার। দেশপ্রেমিক চিন্তাশীল মানুষ দরকার। এ বিচারটা করবে কি আমাদের হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট? বিচার করবে জাতির আদালত। এখন তাদের বোকা ভাবার কোনও সুযোগ নেই। জনগণ বিচার করবে অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ। সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। সিদ্ধান্ত আসলে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। এখানে কোনও ফ্যাসিবাদ বা টাকার খেলা চলবে না। গুরুত্ব বাড়িয়ে মৌলিক সংস্কার করে একটি নির্বাচন দিন। আমরা চাপ দিচ্ছি না। তবে আমরা অনুরোধ করবো, দীর্ঘায়িত না করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেন। গত ১৭ বছর ৪২ ভাগ যুবক একটি ভোটও দিতে পারেনি। আমরা চাই, যারা রক্ত দিয়েছে তারা শুধু ভোট দেবে না, তারা নেতৃত্বও দেবে জাতিকে। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছিল। এই দলকে সবচেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছে বিগত সরকার। আলেমদের ওপর আঘাত দিয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর আঘাত দিয়েছে। আর তারা হত্যার মিশন নিয়ে নেমেছিল। শেষ দিন পর্যন্ত তারা মানুষকে হত্যা করেছিল। জাতি এদের বিচার চায়। তাদের বিচার করতে হবে। জামায়াত আমির বলেন, আমরা ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে কারোর ওপর প্রতিশোধ নিতে চাই না। প্রতিশোধ মানে আইন হাতে তুলে নেওয়া। আমরা সেটা চাই না। আমরা বিচার চাই। প্রতিটি হত্যা ও অপরাধের বিচার চাই। এসব বিচার যদি না হয় সন্ত্রাসীরা প্রশ্রয় পাবে। তিনি বলেন, প্রবাস এবং দেশ থেকে যারা যুদ্ধ (জুলাই-আগস্টের আন্দোলন) করেছে তাদের লালগোলাপের শুভেচ্ছা। বিদেশের মাটিতে যারা সংগ্রাম করেছেন তাদেরও সালাম জানাই। এখনও বিদেশের বিভিন্ন জেলে আন্দোলনকারীরা রয়ে গেছেন। সরকারকে অনুরোধ করবো, তাদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে দিন। না হয় সম্মানের সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন। কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশ আমাদের সবার। আমরা বারবার বলেছি বাংলাদেশের কোনও মেজরিটি মাইনরিটি মানি না। ‘মাইনরিটি’ বলে বলে একটি গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র করছে। ভারতীয় হলুদ মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। জগন্নাথ হল থেকে আমাদের হিন্দু ছেলেমেয়েরা বের হয়ে প্রমাণ করেছে সেটা ষড়যন্ত্র। কেন ভারত আমাদের সঙ্গে এটা করে। আমরা তাদের কি ক্ষতি করেছি। আমরা কি ভারতের কোনও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছি? তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন, চট্টগ্রামের আদালতে একজন আইনজীবীকে কারা খুন করেছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের মুখে চুনকালি লেপে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ বলে দিয়েছে, এই খুনের বিচার হবে। কিন্তু নির্বিচারে সবার গায়ে হামলা করতে চাই না। ভারত কি এমন একটা উদাহরণ দেখাতে পারবে? তাদের দেশের বুকে কি আছে এমন উদাহরণ? ১৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া জামায়াতের এই কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল নামে। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা মহানগর জামায়াত ইসলামীর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।