এফএনএস: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেছেন, দেশে তিনটি নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সে নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা ছিলেন নাম সর্বস্ব। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজে সময় ব্যয় করেছেন। সংসদ সদস্যরা (এমপিরা) নিজ নিজ এলাকায় রীতিমতো জমিদার হয়ে যান। গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উদ্যোগে আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। রেহমান সোবহান বলেন, স্বাধীনতা পূর্ব পাকিস্তানে দুই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বৈষম্য তৈরি করেছিল। স্বাধীনতার সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা সে বৈষম্যমূলক অবস্থার অবসান ঘটালেও আরেক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এর থেকে উত্তরণের বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগের কথা শোনা গেছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তারা সরকারের নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করে। ফলে সব নীতি তাদের পক্ষে তৈরি হয়েছে। এ নীতি শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজে আসেনি। বঞ্চনা আরও বেড়েছে। সম্পদের বণ্টনে অসমতা তৈরি করেছে। স্বাধীনতার অর্ধশতক পার হলেও এখনে যেভাবে পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল এমনটা হয়নি, বড় একটি জনগোষ্ঠী এখনো দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। বিগত সরকারের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান ও গুণগত মান নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও সে সময় দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি ভালো ছিল বলে মন্তব্য করেন এ অর্থনীতিবিদ। দারিদ্র্যের বহুমুখী সূচকেও বাংলাদেশ ভালো করেছে। মানব উন্নয়নেও ভালো করেছে। তিনি বলেন, শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনেও দারিদ্র্যবিমোচনের বিষয়টি নিয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখযোগ্য। দারিদ্র্যের হার ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নিয়ে আসা যে কোনো বিচারে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন এ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, পুষ্টিমান, শিশুমৃত্যু, পড়াশোনার সময়, পানের পানির প্রাপ্যতা, আবাসন—এসব ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। এ বাস্তবতায় গবেষকদের কাজ হবে বাংলাদেশ প্যারাডক্সের নতুন ধরনের সন্ধান করা। এতদিন সুশাসনের অভাবের মধ্যে কীভাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা নিয়ে ছিল বিস্ময়। এখন দেখতে হবে, এ ধরনের অসম সমাজ ও অপশাসনের মধ্যে কীভাবে দারিদ্র্যবিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে এতটা ভালো করল বাংলাদেশ। তার বিশ্বাস, এ গবেষণা করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যেভাবে ঋণখেলাপিরা সুবিধা পেয়েছেন, সরকারের এ জাতীয় নীতি দেশে অসমতা বাড়িয়েছে। রেহমান সোবহান আরও বলেন, সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। কিন্তু সে বৈষম্যের চরিত্র যথাযথভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে না। কোথায় কোথায় কোন খাতে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, তা নিরূপণ করা গেলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। অনুষ্ঠানে দেশ–বিদেশের অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল শনিবার শুরু হওয়া চারদিন ব্যাপী বিআইডিএসের এ সম্মেলন চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত।