এফএনএস বিদেশ : সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত ‘নতুন সূর্যোদয়’ উদযাপন করতে গতকাল সোমবার রাজধানী দামেস্কের প্রধান চত্বরে দলে দলে জড়ো হন দেশটির সাধারণ নাগরিকেরা। সিরিয়ার ইতিহাসে আসাদ পরিবারের পাঁচ যুগের শাসনের অবসান হয় গত রোববার। ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের দুর্বার আক্রমণের মুখে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ রাজধানী থেকে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন। আর এর মাধ্যমে সিরিয়ায় ক্ষমতার পালাবদলের নতুন যুগের সূচনা হয়। দামেস্কে বিদ্রোহীদের জারি করা রাতভর কারফিউ শেষে উমায়াদ স্কয়ারে জয়োল্লাসে মেতে ওঠেন অধিবাসীরা। এ সময় শহরে মোতায়েন ছিল যোদ্ধাদের দলও। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে ৪৯ বছর বয়সী রিম রামাদান নামের একজন সরকারি চাকরিজীবী শহরের প্রাণকেন্দ্রে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এটা বর্ণনায় প্রকাশ করার মতো নয়, আমরা ভাবতেও পারিনি এই দুঃস্বপ্ন শেষ হবে, আমরা পুনর্জন্ম পেয়েছি।’ রামাদান আরও বলেন, ‘গত ৫৫ বছর ধরে আমরা কথা বলতে পারিনি, এমনকি বাড়িতেও কথা বলার সময় আমরা বলতাম দেওয়ালেরও কান আছে। আমাদের এমন মনে হচ্ছে যে আমরা স্বপ্নের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।’ গণতন্ত্রের পক্ষে প্রতিবাদ জানাতে থাকা নাগরিকদের ওপর নৃশংস দমনপীড়নের মাধ্যমে ১৪ বছর ধরে যে গৃহযুদ্ধ চলে বাশার আল-আসাদের পতনের মাধ্যমে তা শেষ হলো বলে মনে করা হচ্ছে। এই যুদ্ধে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয় আর দেশের অর্ধেক নাগরিক হয়ে পড়ে বাস্তুহারা। লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেয়। বাশার আল-আসাদ উত্তরাধিকার সূত্রে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদের কাছ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার এমন একটি ব্যবস্থা পান যেখানে সন্দেহজনক যেকোনো কাজের জন্য জেল খাটতে হতো বা মৃত্যুকে মেনে নিতে হতো। গণঅসন্তোষ ও সশস্ত্র বিদ্রোহ সত্ত্বেও বাশার রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনে ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন। তবে ২৭ নভেম্বর থেকে ইসলামপন্থি হায়াত তাহরির আল-শামস সংগঠনের নেতৃত্বে বিদ্রোহীদের জোট নতুন করে সংঘবদ্ধ হয়ে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে। আক্রমণের এই ধারায় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহরে দখল করে নেয় বিদ্রোহীরা। সবশেষ গত রোববার রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মাধ্যমে তাদের বিজয় নিশ্চিত হয়। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর থেকে বাশার সরকারের নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়ে। বিদ্রোহীরা একে একে দখল করে নেয় আলেপ্পো, হামা, দারা ও হোমস শহর। এরপর নিয়ন্ত্রণ নেয় রাজধানী দামেস্কের। আর এর মাধ্যমেই বাথ পার্টির কয়েক যুগের শাসনের অবসান ঘটে।