এফএনএস এক্সক্লুসিভ: নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভাতা বন্ধে উপকারভোগী দরিদ জনগোষ্ঠি চরম বিপাকে পড়েছে। বিগত সরকার হতদরিদ্র মানুষের আর্থিক দুরবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বেশ কিছু ভাতা কার্যক্রম চালু করেছিলো। ওই লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরেও ভাতাভোগীদের জন্য ৯ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ৬০ লাখ বয়স্ক ভাতা, ২৮ লাখ বিধবা ভাতা, ৩২ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, ১৩ লাখ হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা, ছয় হাজার বেদে জনগোষ্ঠীর ভাতা এবং ৬০ হাজার অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এই বিশেষ ভাতা পেতো। তিন মাস পর পর ওই ভাতার টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু উপকারভোগীরা গত জুলাইয়ের পর থেকে আর ভাতা পাচ্ছে ণা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনসহ অন্য অফিসগুলোতে ধরনা দিয়েও মিলছে না কোনো সদুত্তর। ভুক্তভোগী এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভাতা না পাওয়ায় উপকারভোগী হতদরিদ্র পরিবার বিপাকে পড়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকট বেড়ে গেছে। তার ওপর সময়মতো ভাতা না পাওয়ায় ওই সংকট আরো বেড়েছে। এ অবস্থায় অনেক অসুস্থ ও বয়স্ক ভাতাভোগী প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারছে না। কেউ ভাতার ভরসায় পণ্য বাকিতে কেনেন। সেই বকেয়াও পরিশোধ করতে পারছে না। মূলত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় নতুন তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের ভাতা দেয়া হয়নি। বিগত সরকারের আমলে করা ভাতাভোগীদের তালিকা নিয়ে দলীয়করণের অভিযোগ থাকায় বর্তমানে ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অনেক সচ্ছল ব্যক্তি ভাতার তালিকায় নিজের নাম তুলে দীর্ঘদিন ধরে ভাতা উত্তোলন করছিলো। অনেকে ঘুষ দিয়েও তালিকাভুক্ত হয়ে ভাতা তুলে নিচ্ছে। শুরু থেকেই উপকারভোগী নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইউনিসেফের এক জরিপেও ওসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তাছাড়া বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণায়ও এ ধরনের সত্যতা পাওয়া গেছে। ইউনিসেফের জরিপের তথ্যানুয়ায়ী উপকারভোগীর তালিকার ৪৩ শতাংশ ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ সোয়া কোটি ভাতাভোগীর মধ্যে ৫০ লাখ সচ্ছল ব্যক্তির নাম রয়েছে। বর্তমান সরকার এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে ভাতাভোগীর তালিকা পর্যালোচনা করে অযোগ্যদের বাদ দিয়ে প্রকৃত হতদরিদ্রদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তালিকা পর্যালোচনা শুরু হলেও এখনো শেষ না হওয়ায় ভাতা চালু করা যাচ্ছে না। মূলত যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দেয়ায় নতুন করে ভাতা দেওয়া শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। কারণ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি অনুপস্থিত রয়েছেন। অনেকের নামে মামলা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগ হলেও দায়িত্ব বুঝে নিতে সময় লাগছে। এদের সহযোগিতা ছাড়া তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব নয়। ফলে উপকারভোগীর নতুন তালিকা করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এদিকে এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ জানান, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় কোনো ভাতা বন্ধ করা হয়নি। ভাতাভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই চলছে। কারণ তালিকা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত হতদরিদ্রদের পরিবর্তে দলীয় সচ্ছল কর্মী-সমর্থকদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন তারা ভাতাও তুলেছে। প্রকৃত দরিদ্রদের তালিকা চূড়ান্ত করে চলতি মাসেই ভাতা দেয়া শুরু করা সম্ভব হবে।