জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নতুন নির্বাচনী সামগ্রীতে। এ বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দেনের নেতৃত্বাধিন পাঁচ সদস্যের কমিশন। এই মালামাল কিনতে সময় লাগতে পারে আগামী ছয় থেকে সাত মাস। এসব মালামাল কেনায় ব্যয় সংকোচনের নীতি অনুসরণের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি বা শাখাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খবর সভার নির্ভরযোগ্য সূত্রের। ইসির সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন, কমিশন আজ (গতকাল) বিকালে সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী সামগ্রীর সার্বিক বিষয়ে অবহিত হওয়ার জন্য সভায় মিলিত হন। সভায় আমরা প্রজেকশনের মাধ্যমে নির্বাচনী সামগ্রীর সাবিক চিত্র কমিশনের সামনে তুলে ধরেছি। কমিশনকে জানানো হয়েছে, একবার ক্রয় করা নির্বাচনী সামগ্রী দিয়ে কাছাকাছি সময়ের দুটি নির্বাচনের বেশি করার অতীত কোনো নজির নেই। ইতিমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এসব সামগ্রী পদত্যাগী কে এম হাবিবুল আউয়াল এর নেতৃত্বাধিন কমিশনের ক্রয় করা। এরই মধ্যে সব মালামাল পরবর্তী নির্বাচনে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে বলে ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী সামগ্রী কেনার বিষয়ে প্রস্তুতি সভা করলো কমিশন। কমিশন সূত্র বলছে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করায় এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুরোপুরি মনোনিবেশ ঘটলো নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। এর আগে ভোটার তালিকা কাযক্রম শুরুর মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের কমযজ্ঞে প্রবেশ করার প্রথম ধাপ ছিল। আর বৃহস্পতিবার কমিশন সভা আহবান করে নির্বাচনের মূল কর্মযজ্ঞ নির্বাচনী সামগ্রী সাবিক পরিস্থিতি সম্পকে অবহিত হলেন। এর মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলে আনুষ্ঠানিভাবে যাত্রা শুরু করলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধিন পাঁচ সদস্যের কমিশন। সভার প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লা বলেন, এই সভাটি ছিলো সংসদ নির্বচনের প্রস্তুতিমূলক সভা। সভায় নিব১চনের লজিস্টিক সাপোর্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো ইসির অভ্যন্তরীণ ইস্যু। তাই বিস্তারিত আপনাকে জানাতে পারছি না। আপর নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ বলেন, সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী সামগ্রী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব মালামাল বিগত নির্বাচনের কেনা হলেও সেগুলোর মধ্যে কতটুকু ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে সে সম্পর্কে আমরা অবহিত হয়েছি। তাদের প্রয়োজনী চেকলিস্ট তৈরির জন্য পরামর্শ দিয়েছি। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমরা বলেছি, প্রয়োজন অনুযায়ী নিব১াচনী সামগ্রী কেনার জন্য। এই কাজে যাতে বাড়তি একটি টাকাও খরচ না হয় সেটির দিকে বিশেষ নজর রাখতে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। সব কিছুর মূলে ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছি, যোগ করেন সাবেক জেলা জজ এই নির্বাচন কমিশনার। সভা সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রওয়ারী কতগুলো নির্বাচনী সামগ্রী কেনা হয়েছিল তার একটি চেকলিস্ট তুলে ধরেন সংশ্লিস্ট নির্বাচনী শাখার কর্মকর্তারা। সেখানে দেখানো হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে কতগুলো সামগ্রী কেনা হয়েছিল এবং এয়োদশ সংসদ নির্বাচনে কি পরিমাণ সামগ্রী কেনার প্রয়োজন পড়বে। সেখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ থেকে ১০ শতাংশ বেশি আগামী সংসদ নির্বাচনে কেনার বিষয়ে প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য সামগ্রীর পরিমাণ ও ব্যয় দুটিই বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সভার নথির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তিনশ সংসদীয় আসনের নির্বাচন করার জন্য প্রায় ৭০ ধরণের নির্বাচনী সামগ্রী কেনার প্রয়োজন হয় ইসির। প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম থেকে সম্ভাব্য ৪৮ হাজার কেন্দ্রের সম্ভাব্য ভোটকক্ষ দুই লাখ ৯৫ হাজারটির জন্য নির্বাচনী সামগ্রী রয়েছে। এর মধ্যে লাল গালা প্রতিটি কেন্দ্রে ১ প্যাকেট হিসেবে ৪৮ হাজার প্যাকেট, পরবর্তী উপনির্বাচনসহ অন্যান্যের জন্য অতিরিক্ত ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৫২ হাজার ৮০০। এখাতে আগামী নির্বাচনের জন্য মোট ক্রয় করতে হলে লাল গালা ৫৫ হাজার প্যাকেট যার ওজন হবে ১১ হাজার কেজি। একই ভাবে স্প্যাম্পপ্যাডপ প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য একটি এবং প্রতিটি অতিরিক্তি ভোটকেন্দ্রের জন্য ২টি মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার, অমোচনীয় কালির কলম প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য একটি এবং প্রতিটি অতিরিক্তি ভোট কেন্দ্রের জন্য ২টি মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য একটি এবং প্রতিটি অতিরিক্তি ভোটকেন্দ্রের জন্য ১টি এবং প্রশিক্ষণের জন্য বাড়তি ২০ শতাংশসহ ২৩ লাখ, ব্যালট বাক্স প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য একটি এবং প্রতিটি অতিরিক্তি ভোটকেন্দ্রের জন্য ১টি মোট ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৩০০টি, ব্যালট বাক্সেও ঢাকনা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য একটি এবং প্রতিটি অতিরিক্তি ভোটকেন্দ্রের জন্য ১টি মোট ৩ লাখ ৪৩ হাজার, গানি ব্যাগ শুধু ব্যালট পেপার পরিবহনের জন্য দ্বাদশ সংসদের জন্য কেনা হয় ৪২ হাজার এবার তা বাড়িয়ে কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৬ হাজার, হেসিয়ার ব্যঠস প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য ৬৯ হাজার ৩০০, হেসিয়ান ছোট ব্যাগ ৫২ হাজার ৮০০, মার্কিং সিল ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৬০০, অফিসিয়াল সিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার, ব্রাশ সিল ৫২ হাজার ৮০০। নির্বাচনী সামগ্রী মজুদ রয়েছে, গানি ব্যাগ ১৫ হাজার, হেসিয়ান ব্যাগ ৯ হাজার, হেসিয়ান ছোট ব্যঠস ৬ হাজার, মার্কিং সিল ৬০ হাজার, অফিসিয়াল সিল ৯৬ হাজার, ব্রাশ সিল ১১ হাজার, লাল গালা ১৫ হাজার, স্প্যাম্প প্যাড ২৮ হাজার ২৯০ডঁ, অমোচনীয় কালির কলম ৯৫ হাজারটি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক ৬ লাখ ৮০ হাজার, ব্যালট বাক্স ও ব্যালট বাক্সেও ঢাকনা মজুদ নেই বলে ইসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে কমিশন।