মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫০ অপরাহ্ন

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলাওয়াশ করলো টাইগাররা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

জাকের আলির বিষ্ফোরক ইনিংসের সুবাদে টি—টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মত হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। গতকাল শুক্রবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৮০ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। টি—টোয়েন্টিতে আইসিসি পূর্ণ সদস্য কোন দেশের বিপক্ষে রান বিবেচনায় সবচেয়ে বড় জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। আগেরটি ছিল গত বছর মার্চে চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৭ রানের। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ যথাক্রমে— ৭ ও ২৭ রানে জিতেছিলো বাংলাদেশ। এই প্রথম তিন ম্যাচের টি—টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলো টাইগাররা। ২০১২ সালে সর্বশেষ বিদেশের মাটিতে তিন ম্যাচের টি—টোয়েন্টি সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছিলো বাংলাদেশ। সেন্ট ভিনসেন্টে ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৮ বলে ৪৪ রানের সূচনা পায় টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ৪ ওভারে ১৫ বলে ২৯ রান তোলেন ইনজুরি আক্রান্ত সৌম্য সরকারের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া ইমন। পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার রোমারিও শেফার্ডের বলে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে আউট হন ওপেনার ও অধিনায়ক লিটন দাস। ৩টি চারে ১৪ রান করেন লিটন। দারুণ শুরুর পর পাওয়ার প্লের শেষ বলে বিদায় নেন ইমন। পেসার আলজারি জোসেফের বলে স্কয়ার লেগে জাস্টিন গ্রেভসকে ক্যাচ দেন ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২১ বলে ৩৯ রান করা ইমন। তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে এবারও ব্যর্থ হন তানজিদ হাসান। ৯ রান করে স্পিনার গুদাকেশ মোতির বলে উইকেটরক্ষক নিকোলাস পুরানকে ক্যাচ দেন তানজিদ। এতে দলীয় ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। উইকেট পতন ঠেকিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৩১ বলে ৩৭ রান যোগ করে ১৩তম ওভারে দলের রান ১শ পার করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাকের। উইকেটে সেট হয়ে ১৩তম ওভারে সাজঘরে ফিরেন মিরাজ। স্পিনার রোস্টন চেজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে সীমানার কাছে গ্রেভসকে ক্যাচ দেন ৩টি বাউন্ডারিতে ২৩ বলে ২৯ রান করা মিরাজ। মিরাজ ফেরার পর ১৫তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শামীম হোসেন ২ ও মাহেদি হাসান শূন্যতে রান আউট হন। এরমধ্যে নাটকীয়ভাবে রান আউট হন শামীম। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা শামীমের দিকে চলে যান জাকের। ঐসময় বল নিয়ে নন—স্ট্রাইকের উইকেট ভেঙে দেন চেজ। নিজেকে রান আউট ভেবে মাঠ ছাড়েন জাকের। কিন্তু টিভি আম্পায়ার ভিডিও রিপ্লেতে জানান, স্ট্রাইক প্রান্তে শামীমের আগে ক্রিজে ব্যাট স্পর্শ করেছেন জাকের। তাই রান আউট হন শামীম। ১৬ বলে ১৭ রানে জীবন পান জাকের। ১১৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন জাকের ও তানজিম হাসান সাকিব। সপ্তম উইকেটে দু’জনের ২৭ বলে ৫০ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথ পায় টাইগাররা। ১৯তম ওভারের শেষ বলে তানজিমকে আউট করে জুটি ভাঙেন শেফার্ড। ১টি করে চার—ছক্কায় ১২ বলে ১৭ রান করেন তানজিম। ৩৪ বলে ৪৮ রান নিয়ে শেষ ওভার শুরু করেন জাকের। আলজারির দ্বিতীয় বলে চার মেরে টি—টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় হাফ—সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৩৬ বল খেলা জাকের। এরপর ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে ছক্কা মারেন জাকের। শেষ ওভার থেকে ২৫ রান আসায়, ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি—টোয়েন্টি এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের। শেষ ১০ ওভারে ১১৩ ও শেষ ৫ ওভারে ৭৫ রান তুলে টাইগাররা। এরমধ্যে জাকেরের সংগ্রহ ছিলো ৩৪ বলে ৬৭ রান। শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৪১ বলে ১৭৫ স্ট্রাইক রেটে অপরাজিত ৭২ রান করেন জাকের। ২২ ম্যাচের টি—টোয়েন্টিতে এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আগেরটি এ বছরের মার্চে সিলেটে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩৪ বলে ৬৮ রান করেছিলেন জাকের। বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেফার্ড ২টি, আলজারি—চেজ ও মোতি ১টি করে উইকেট নেন। জবাবে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে পেসার তাসকিন আহমেদের বলে লেগ বিফোর আউট হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার ব্রান্ডন কিং। পরের ওভারে গ্রেভসকে ৬ রানে ফেরত পাঠান স্পিনার মাহেদি। ৭ রানে ২ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশ বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমন করেন আরেক ওপেনার জনসন চালর্স ও নিকোলাস পুরান। মারমুখী ব্যাটিংয়ে বড় জুটির আভাস দিচ্ছিলেন তারা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পুরানকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন মাহেদি। ১০ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ রান করেন পুরান। গ্রেভস—পুরান জুটি ২৪ বলে ৩৮ রান যোগ করেন। দলীয় ৪৫ রানে পুরান ফেরার পর ব্যাটিং ধস নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৬ দশমিক ৪ ওভারে ১০৯ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাত নম্বরে নামা রোমারিও শেফার্ডের ২৭ বলে ৩৩ রানে কোন মতে দলীয় ১শ রান স্পর্শ করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে ৪ ওভারে ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলার রিশাদ। এছাড়া তাসকিন—মাহেদি ২টি করে এবং তানজিম—হাসান ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন জাকের। ব্যাট হাতে ৩৭ রান ও বল হাতে ৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন মাহেদি। এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১—১ সমতায় শেষ করলেও, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। টি—টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে সাফল্য নিয়ে বছরটি শেষ করতে পারলো লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দলটি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com