শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না দেশের পাট খাত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না সোনালি অঁাশ নামে খ্যাত পাট খাত। গত কয়েক বছর ধরে পাট রপ্তানিতে ধস নেমেছে। তারা ধারাবাহিকতা এখনও রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) ৭৭ কারখানার মধ্যে মাত্র দুই ডজন কারখানা পুরোদমে চালু আছে। ফলে পাটের সুতার উৎপাদন কমেছে ৪০ শতাংশ। পাটের সুতা এ খাতের প্রধান রপ্তানি পণ্য। ২০২০—২১ অর্থবছরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার পাটের সুতা রপ্তানির পর থেকেই চালান কমছে। কাঁচা পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাটের সুতার দাম বেশি। তাই অনেক বিদেশি ক্রেতা তুলার সুতা ও পলিপ্রোপিলিনের (পিপি) দিকে ঝুঁকেছেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০২৩—২৪ অর্থবছর শেষে এই প্রাকৃতিক সুতা থেকে সামগ্রিক রপ্তানি আয় ৪৯২ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এই বছরগুলোয় পাটের বস্তা ও ব্যাগের রপ্তানিও কমেছে। ২০২৩—২৪ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় ৮৫৫ মিলিয়ন ডলারে পেঁৗছে। আগের বছরের তুলনায় ছয় শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ কমে ৩৪১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিজেএসএর চেয়ারম্যান তাপস প্রামাণিক বলেন, এ খাতের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা অনেক চেষ্টা করছি। হাতে গোনা কয়েকটি কারখানা এখন ভালোভাবে চলছে। তিনি বলেন, কম্পোজিট কারখানাগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। বিশ্ববাজারে আমরা ধীরে ধীরে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছি। আমরা ভারতে রপ্তানি করতাম। ভারত সরকার অ্যান্টি—ডাম্পিং শুল্ক আরোপের পর সেখানে রপ্তানি কমেছে। কাঁচা পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাটের সুতার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ খাত অতীতের মতো নীতিগত সহায়তা পায়নি। তিনি আরও বলেন, বাধ্যতামূলক পাটমোড়ক আইন দেশের বাজারে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে আমরা এই মন্দা সময় পার করতে পারতাম। চাল, গম, ভুট্টা, ডাল ও আটাসহ ১৯ নিত্যপণ্য প্যাকেজিংয়ের জন্য পাটের বস্তা বাধ্যতামূলক করে ২০১০ সালে আইন করে সরকার। যাহোক, চাল কলের আইন মেনে চলা শুরু করতে পাঁচ বছর লেগেছিল। অনেকে তখন থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগের দিকে ঝুঁকে আছেন। বিজেএসএর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দেশের বাজারে প্লাস্টিকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক ঋণের কারণে বেশিরভাগ কারখানা ন্যূনতম কার্যক্রম বজায় রাখতে উৎপাদন অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে, চলমান পরিস্থিতির মধ্যেই বেসরকারি খাতে থাকা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) তিনটি পাটকলের ইজারা বাতিল হচ্ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ায় ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এসব পাটকল চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তিন প্রতিষ্ঠানই নিজেরা চুক্তি বাতিল চেয়েছে বলে জানিয়েছে বিজেএমসি। ইজারা বাতিল হওয়া পাটকলগুলো হলো— সিরাজগঞ্জ রায়পুরের জাতীয় জুট মিলস্, চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের এম এম জুট মিলস্ এবং একই এলাকার আর আর জুট মিলস। ২০২২ সালে এসব পাটকল ইজারা নিয়েছিল বেসরকারি খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠান রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড, স্টিল মাকর্স বিল্ডিং লিমিটেড ও বেস্ট স্টাফ জুট মিল। বিজেএমসি জানায়, গত ৫ আগস্টের পরে জাতীয় জুট মিল ও আর আর জুট মিলের চুক্তি বাতিল করেছে ইজারা নেওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া এম এম মিলের চুক্তি বাতিলের আবেদন রয়েছে, সেটা প্রক্রিয়াধীন। বিজেএমসির মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তা নাসিমুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে এসব পাটকল আর চালাতে চায় না লিজ নেওয়া ওইসব প্রতিষ্ঠান। সেটা বাতিল করছে, সে সুযোগ তাদের আছে। তবে এ বিষয়ে ইজারা বাতিল করা তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনোটিরই বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল। তিনটি পাটকলের ইজারা বাতিল হওয়ার পরে আরও ১১টি পাটকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে। বিজেএমসির বন্ধ ২৫টি পাটকলের মধ্যে ২০টি ইজারা দেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ১৪টি পাটকল বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। বছরের পর বছর লোকসান গুনতে থাকা ২৫টি পাটকল ২০২০ সালের ১ জুলাই বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। এরপর পাটকলগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দিয়ে চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বর্তমানে ইজারা দেওয়া পাটকলগুলো হলো— খালিশপুর জুট মিলস্, কার্পেটিং জুট মিলস্, ইউএমসি জুট মিলস্, বাংলাদেশ জুট মিলস্, রাজশাহী জুট মিলস্, কেএফডি জুট মিলস্, মিলস ফারনিশিংস লিমিটেড, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, দৌলতপুর জুট মিলস্, গুল আহমদ জুট মিলস্ ও গলফ্রা হাবিব লিমিটেড। জানা যায়, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বিজেএমসি গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২। এরশাদ সরকারের সময় ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রত্যাহার করা হয় আটটি পাটকলের পুঁজি। ১৯৯০ সালের পর বিশ্বব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভূত করা হয়। ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় আদমজী জুট মিল। বিজেএমসির অধীনে থাকা ২৬টি পাটকলের মধ্যে শেষ পর্যন্ত (২০২০) চালু ছিল ২৫টি। এগুলোর মধ্যে ২২টি পাটকল ও তিনটি নন–জুট কারখানা। এসব পাটকলের মোট জমির পরিমাণ ১ হাজার ৩১৩ একর।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com