আশাশুনি প্রতিনিধি \ আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। এ পদ্ধতিতে এক ফসলি ধানি জমি থেকে বাড়তি ফসল হিসেবে বিপুল পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হচ্ছে এখানে। আরও বৃহৎ পরিসরে এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষ করে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, আমন ধান কাটার পর অনেকে বোরো ধান রোপণের কিংবা ঘেরে পানি উঠানোর আগ পর্যন্ত উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমি অলস পড়ে থাকে। কয়েক বছর আগে এই সময়টা কাজে লাগিয়ে বাড়তি ফসল হিসেবে বিনা চাষে সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এই পদ্ধতি এখন কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, আশাশুনি উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে প্রায় ৭১০ হেক্টর জমিতে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার ৫নং বড়দল ইউনিয়নে এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি ১৪৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এ ইউনিয়নের ডুমুরপোতা, জামালনগর, কেয়ারগাতী, গোয়ালডাঙ্গা, চাম্পাখালী, নড়েরাবাদ, বামনডাঙ্গা, ফকরাবাদ, বুড়িয়া, মধ্যম বড়দল, দক্ষিণ বড়দল সহ অধিকাংশ গ্রামের ধানি জমি এখন দৃষ্টিনন্দন হলুদ সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে। গোয়ালডাঙ্গা কৃষক আ: মজিদ জানান, আমন ধান কাটার ৫/১০ দিন আগে খেতে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পরে ধান কেটে নিলে সরিষা গাছ সতেজ হয়ে ওঠে। আরেক চাষি রেজাউল ইসলাম জানান, আমন কাটার পর জমি জো হতে ১০/১২ দিন কেটে যায়। এরপর জমি চাষযোগ্য করতে ১০/১২ দিন চলে যায়। ফলে চাষ করে সরিষা বুনলে সরিষা তুলে ঘেরে পানি তুলতে দেরি হয়ে যায়। এ ছাড়া বিঘাপ্রতি জমি চাষের খরচও পড়ে যায় হাজার টাকার ওপরে। তাই বিনা চাষে সরিষা আবাদ করায় চাষের খরচ বেঁচে যাচ্ছে, উৎপাদন খরচও কমে আসছে। একই এলাকার কৃষক হাফিজ জানান, এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষে প্রতি বিঘায় মাত্র ১ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে প্রতি বিঘায় সরিষা পাওয়া যায় ৩ থেকে ৪ মণ পর্যন্ত। যার বাজার মূল্য ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আশাশুনি উপজেলা বড়দল ইউনিয়নের উপ—সহকারী কৃষি অফিসার নাজমুস সাকিব জানান, এক সময় আমন ধান কাটার পরে বড়দল ইউনিয়নের হাজার হাজার বিঘা জমি গোচারণভূমিতে পরিণত হতো। দীর্ঘমেয়াদি আমন ধানের জাত চাষ করার কারণে পরবর্তীতে ফসল করা সম্ভব হতো না। বর্তমানে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। রিলে সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ বছর প্রণোদনা পুর্ণবাসন হেল্পের আওতায় ও ব্র্যাক ও অন্যান্য এনজিওর সহায়তায় আনুমানিক ৭০০ জনের বেশি কৃষকের মাঝে স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন ব্রিধান ৭৫, ৪৯, ৮৭, ১০৩ সরবরাহ করা হয় এবং পরবর্তীতে প্রণোদনের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ২২০ জন কৃষকের মাঝে বারি সরিষা ১৪, ১৭ ও বিনা সরিষা ৯ সরবরাহ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে এ বছর বড়দল ইউনিয়নে প্রায় ১৪৩ হেক্টর জমিকে সরিষা চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে যার মধ্যে ১২০ হেক্টরের বেশি রিলে পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদ করা হয়েছে। আবাদকৃত এ সরিষা স্থানীয় তেলের চাহিদা মিটাবে এবং দেশের জিডিপিতে ৯০ লক্ষ টাকার বেশি যোগ করবে। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একিভূত হয়ে কাজ করা যায় তাহলে পরবর্তী বছরগুলোতে সরিষার আবাদ উল্লেখ যোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশাকরি।