শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সচিবালয়ে আগুন: তদন্ত কমিটির অনুসন্ধান শুরু টোল প্লাজায় অপেক্ষমাণ গাড়িতে বাসের ধাক্কা, ৫ জন নিহত ষড়যন্ত্রকারীরা জুলাই বিপ্লবের অর্জন নস্যাৎ করতে পারবে না: অ্যাটর্নি জেনারেল দুই মাসের মধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দল গড়ে উঠবে: সারজিস জাতিকে বদলে দিতে আপনাদের অন্তরে যেন জায়গা পাই: জামায়াত আমির বিএনপির সংস্কার চায় না, এ কথাটি সঠিক নয়: মির্জা ফখরুল ৮দলীয় নক—আউট ক্রিকেট টুর্নামেন্টে মুনজিতপুর ক্রিকেট ক্লাব চ্যাম্পিয়ন সাতক্ষীরায় ইমদাদ ম্যাজিক ইংলিশ এর উদ্যোগে পুরস্কার বিতরণ দেবহাটায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও কাওয়ালী সন্ধ্যা দেবহাটা পাইলট হাই স্কুলে শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলন ও কৃতিশিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান

সিসা দূষণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে দেশের শিশুরা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: সিসা দূষণে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে বাংলাদেশ। বিষাক্ত এই ধাতুটির কারণে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে। আর বিপজ্জনক মাত্রায় দেশে সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশুর রক্তে সিসা রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে ইউনিসেফ। যার প্রভাবে শিশুদের শরীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। জানা গেছে, বিভিন্নভাবে সিসা পরিবেশে ছড়াচ্ছে। ব্যাটারি ভাঙা শিল্প, সিসাযুক্ত দেয়ালের রঙ, অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি—পাতিল, খাবার রাখার সিরামিকের পাত্র, ই—বর্জ্য, খেলনা, সার, রান্নায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মসলা, প্রসাধনী, চাষ করা মাছের জন্য তৈরি খাবারের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে এই ক্ষতিকর পদার্থটি। খাবারের মাধ্যমে, শরীরের চামড়ার মাধ্যমে ও শ্বাস—প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে এটি। সিসায় দূষিত মাটির সবজি, মসলা (হলুদ চকচকে করতে মেশানো হয়), সিসাযুক্ত সিরামিকের বাসনপত্রের রান্না করা খাবার, বাজারজাত করা দুধ খাওয়ার মাধ্যমে সিসা মানুষের দেহে প্রবেশ করছে। এছাড়া সিসায় দূষিত মাটিতে খেলাধুলা করলে বা এই মাটির সংস্পর্শে এসে কোনো ধরনের কাজ করলে চামড়ায় সিসাযুক্ত ধুলির আস্তরণ পড়ে। আস্তে আস্তে সেটি শরীরে প্রবেশ করে। ফলে ঝুঁকিতে পড়ছে সবাই। সিসা দূষণ একটি জরুরি পরিবেশগত স্বাস্থ্য সংকট, বিশেষ করে বাংলাদেশে। দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন পরিবেশে ভারী ধাতুর দূষণ বাড়িয়েছে। যার ফলে শিশুদের বাতাস, পানি, মাটি, খাবার, খেলনা, রং ও রান্নার সামগ্রীর মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বেড়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটির নারী ও শিশুদের মধ্যে সিসা দূষণের প্রভাব ব্যাপক। এটি ছোট শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতিকর, যা স্থায়ীভাবে তাদের স্নায়বিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণ হচ্ছে। স¤প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ারস বলেন, সাধারণত ভারী ধাতু বিশেষ করে সিসা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ওপর বেশি গুরুতর প্রভাব ফেলে। এই ক্ষতি চিরস্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। দুর্ভাগ্যবশত, শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিকাশের সময়সীমা কমে যায় এবং প্রায় সব অঙ্গ—প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ (কার্ডিওভাসকুলার) দেখা দেয়, গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে তাদের অনাগত শিশুরা হয় ক্ষতিগ্রস্ত। তবে সুস্পষ্ট আইন এবং বিশেষ করে বেসরকারি খাতের সঠিক ও কার্যকরী পদক্ষেপে এই দূষণ প্রতিরোধযোগ্য। এভাবে এই দূষণের ফলে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের যে অতিরিক্ত খরচ ও ভোগান্তি হয়ে থাকে, পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যে বাড়তি খরচ হয়ে থাকে, সেটাও অনেকাংশে কমিয়ে ফেলা সম্ভব। ইউনিসেফ অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে মিলে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে প্রতিটি শিশু সিসা ও বিষাক্ত ধাতুমুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে, খেলতে ও শিখতে পারবে। জানা গেছে, ইউনিসেফ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি)র সঙ্গে মিলে খুলনা, টাঙ্গাইল, পটুয়াখালী ও সিলেট জেলায় ৯৮০ এবং ঢাকায় ৫০০ শিশুকে পরীক্ষা করে সবার রক্তে সিসার উপস্থিতি শনাক্ত করে। এসব নমুনার মধ্যে চার জেলায় ৪০ শতাংশ এবং ঢাকায় ৮০ শতাংশ নমুনায় প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত নূন্যতম মাত্রার চেয়ে যা বেশি। অবশ্য শিশুদের রক্তে কোনো মাত্রায় সিসার উপস্থিতিই নিরাপদ নয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিসা ও ভারী ধাতুর দূষণ একটি নীরব ঘাতক, যা মোকাবিলায় প্রয়োজন জরুরি ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। সবার জন্য একটি সিসামুক্ত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে সিসা দূষণ রোধ করতে অন্তর্বর্তী সরকার সব অংশীজনের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি সব অংশীজনকে এই কর্মশালায় সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই। বাংলাদেশে বিষাক্ত ধাতুর সংস্পর্শে আসার প্রধান উৎসগুলো চিহ্নিত করতে আমরা একত্রে একটি বিস্তৃত ও কার্যকরী কর্ম পরিকল্পনা গড়ে তুলতে পারবো। উল্লেখ্য, শিশুদের সিসার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচানোর ও সিসামুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্য নিয়ে চালু হওয়া বৈশ্বিক উদ্যোগ ‘পার্টনারশিপ ফর এ লেড—ফ্রি ফিউচার (পিএলএফ)’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে সিসা দূষণ রোধের মাধ্যমে শিশুদের ওপর সিসার বিষক্রিয়া নির্মূল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পিএলএফের অংশীদার হিসেবে ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ সিসার সংস্পর্শে আসার উৎসসমূহ চিহ্নিত ও সিসা দূষণ প্রতিরোধ করতে প্রতিশ্রুতির কথা জানান দিয়েছে। পাশাপাশি সুশীল সমাজের সংস্থা ও বেসরকারি খাতের দক্ষতা, সম্পদ ও সহযোগিতা কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com