এফএনএস : ভর্তুকির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বরাদ্দ বাড়াচ্ছে সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী জ¦ালানি তেল, গ্যাস, সারসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়ছে। ফলে বাধ্য হয়েই সরকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ওসব খাতে ভর্তুকির বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে ভর্তুকিতে মোট ১২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকিতে চাপ বাড়ছে। ইতোমধ্যে মূল বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল তার ৭১ শতাংশ ছাড় করা হয়ে গেছে। সেজন্যই সংশোধিত বাজেটে বেশ কয়েকটি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বাড়তি দাম সমন্বয় বা ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য অর্থ বিভাগকে চাপ দিচ্ছে। এমন অবস্থায় সরকার সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়ানোর পথেই হাঁটছে। ফলে আপাতত জ¦ালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং সারের দাম না বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৪৮ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ওই খাতে আরো ১২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৬১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে তেলের বাড়তি দামের কারণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) প্রতিদিন ৮০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত বছরের ৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম যখন ৮৫ ডলার ছিল তখন সরকার দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা মূল্য সমন্বয় করে। গত ২০ বছরে দেশে ১৭ বার ডিজেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৩ বার বেড়েছে আর কমেছে ৪ বার। জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ালে জনজীবন তথা মূল্যস্ফীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। সেজন্যই আপাতত ওই পণ্যের দাম সমন্বয়ের পক্ষে নয় অর্থ বিভাগ। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়তি থাকায় সরকার গত ৮ মাসে এলএনজিতে ৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। চলতি বাজেটে ওই খাতে বরাদ্দ ৬ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া তেলবীজ, সুদ ও টিসিবি খাতে মোট মূল ভর্তুকি বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ওসব খাতে প্রায় ৫ হাজার টাকা ভর্তুকি বেড়ে মোট দাঁড়াচ্ছে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সূত্র আরো জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ খাতের ওপর তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে। কারণ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড় অংশে ওই দুটি জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গত ৮ মাসে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়ে এখন দাঁড়াচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য বেড়েছে কয়েক গুণ। দেশের বার্ষিক প্রায় ৬০ লাখ টন সারের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশই সরকারি সংস্থার নির্ধারিত মূল্যে আমদানি ও বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি ইউরিয়া আমদানির মূল্য আগের অর্থবছরে ৩২ টাকা থেকে চলতি অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬ টাকা। কিন্তু কৃষকদের কথা বিবেচনা করে সরকার সারের মূল্য বাড়াতে পারছে না। ফলে এ খাতেও ভর্তুকির চাপ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে কৃষি খাত ৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা ভর্তুকি পেয়েছে। কৃষি খাতে চলতি অর্থবছর ভর্তুকিতে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ওই খাতে ভর্তুকি বেড়ে মোট দাঁড়াচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এদিকে চলতি জানুয়ারি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সরকার নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। ওই কারণে এ খাতে অর্থ ছাড়ের চাপ বাড়ছে। রেমিট্যান্স খাতে প্রণোদনা বাবদ চলতি বাজেটে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়ে ওই খাতে মোট দাঁড়াচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকা। আর রপ্তানি খাতে প্রণোদনা ও ভর্তুকি বাবদ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ওই খাতে ভর্তুকি বেড়ে দাঁড়াচ্ছে মোট ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। তাছাড়া পাটজাত দ্রব্য রপ্তানিতে ভর্তুকি বাবদ মূল বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৮০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ওই খাতে ভর্তুকি বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।