এফএনএস: সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আসছে না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, শুধু বিএসএফ নয়, সীমান্ত এলাকায় শত্রুতার জেরে দুই পক্ষের অন্তর্কোন্দলেও হত্যা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বিজিটিসি অ্যান্ড সি—তে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আসছে না কেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আসছে না সত্য। পরপর যে দুটি সীমান্ত হত্যা হয়েছে সেটি বিএসএফ নয়, খাসিয়াদের শত্রুতার কারণে তাদের নিজেদের মধ্যে হয়েছে। খাসিয়াপল্লীতে একটু সমস্যা রয়ে গেছে। তিনি বলেন, এপারেও খাসিয়া আছে, ওপারেও খাসিয়া আছে। অনেক সময় খাসিয়ারা এপার থেকে ওপারে যায় এবং নিজেদের মধ্যে থাকা শত্রুতার সুযোগ নেয়। তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে অন্তর্কোন্দল রয়েছে। সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা এবং মাদক চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। ভারত উলটো বাংলাদেশকে হুমকি দিচ্ছে। এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে প্রতিপক্ষের কাছে কোনো অবস্থাতেই পিঠ প্রদর্শন করবে না বিজিবি। বুকটাই যেন দেখায়। যারা হুংকার দিচ্ছে, আমরাও বেশি করে তাদের প্রত্যুত্তর দিচ্ছি। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওদের (ভারত) মিডিয়া প্রচুর মিথ্যা তথ্য ছড়ায়। এই মিথ্যার প্রত্যুত্তর আপনারা (সাংবাদিকরা) দিতে পারেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের আরও সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, বিজিবিতে জনবল সংকট আছে। সীমান্ত ও পাহাড়ে তারা অনেক কষ্ট করে ডিউটি করে। জনবল বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিজিবিতে দুইবার চাকরি করেছি। একবার সেক্টর কমান্ডার এবং অন্যবার বিজিবির মহাপরিচালক ছিলাম। জনবল বৃদ্ধি, খাবারের মান উন্নত করা, থাকার ব্যবস্থার উন্নতি করা দরকার। এই বিষয়গুলো আপনারা (সাংবাদিক) জাতির সামনে তুলে ধরেন। আমাদের জন্য এবং বাহিনীর জন্য অনেক উপকার হবে। মিয়ানমার সীমান্তে প্রতিনিয়ত উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে বাংলাদেশে কোনো আশঙ্কার কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি গতকাল (গত সোমবার) মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শন করে এসেছি। সেখানে ওই ধরনের কোনো উত্তেজনা নেই৷ সীমান্ত সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে। আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার আর্মির মধ্যে যে যুদ্ধ সেই যুদ্ধে আরাকান আর্মি অপোজিটের জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে। এ কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার আর্মি দুই বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, এখন মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আমাদের পতাকা বৈঠক করার মতো জায়গা নেই। যেহেতু তারা এই পাড়ে আসতে পারে না। আরাকান আর্মির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে, তবে তাদের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করা ডিফিকাল্ট (কঠিন)৷ তবে এসবের মধ্যেও বাংলাদেশে কোনো শঙ্কার কারণ নেই। মিয়ানমারে নতুন প্রতিবেশী নিয়ে বাংলাদেশের পদক্ষেপ কী জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এক সময় বন্ধুও শত্রু হয়ে যায়, শত্রু বন্ধু হয়ে যায়। আমাদের ক্ষেত্রে কোন সময় কোন পদক্ষেপ নিতে হবে এ বিষয়ে সরকার সবসময় সজাগ আছে। সীমান্ত এলাকায় নৌ নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন যেতে গেলে নাফ নদী দরকার হয়। নাফ নদী দিয়ে বিজিবি কিংবা কোস্টগার্ড গেলে মিয়ানমার বাধা দেয় না। অনেক সময় বড় বড় জাহাজ নাফ নদী দিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে চাইলে তারা বাধা দেয়। আমাদের সঙ্গে তাদের আলাপ—আলোচনা চলছে। দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে। গত সোমবার টেকনাফ উপজেলা হ্নীলার ইউনিয়নের জাদিমোরা পাহাড় এলাকা থেকে ১৯ জন শ্রমিক অপহৃত হয়েছে। তাদের উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত উদ্ধার হবে। বিজিবির নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের সীমানা রক্ষায় তোমরা প্রয়োজনে জীবন দেবে, তবু দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দেবে না। সীমান্তে প্রতিপক্ষের কাছে কোনো অবস্থাতেই পিঠ প্রদর্শন করবে না। নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে প্রতিপক্ষের কাছে কোনো অবস্থাতেই পিঠ প্রদর্শন না করার জন্য আমি তোমাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। দেশ মাতৃকার রক্ষায় তোমরা প্রয়োজনে জীবন দেবে, তবু দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দেবে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, তোমরা আমাদের হতাশ ও নিরাশ করবে না। জেনে রাখবা, তোমাদের দেওয়া নিশি্ছদ্র নিরাপত্তাই দেশের মানুষের নির্বিঘ্ন ঘুম নিশ্চিত করবে। তোমরাই হবে আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক। তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে সুপরিচিত এ বাহিনী বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা এবং সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের মহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সঙ্গে পালন করে আসছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সৈনিকরা আজ তোমরা যে তেজোদ্দীপ্ত কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেছো তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল তোমাদের কঠোর প্রশিক্ষণ, নিরলস প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও অদম্য আগ্রহের জন্য। মনে রাখবা, বৃহত্তর কর্মজীবনে কাজের ব্যাপ্তি ও পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। তোমরা যখন সীমান্তে নিয়োজিত থাকবে তখন তোমাদের সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার ওপরই নির্ভর করবে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি ও গৌরব।বিজিবির নবীনদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সীমানা রক্ষায় প্রয়োজনে জীবন দেবে, ‘এক ইঞ্চি মাটি’ হাতছাড়া করবে না। এসময় অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ৩০ জুলাই বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসি অ্যান্ড সি) ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রিক্রুট সফলতার সঙ্গে তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘ ২৩ সপ্তাহের কঠোর ও কষ্টসাধ্য এই প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে নারী রিক্রুটরা তাদের সৈনিক জীবন শুরু করলেন।