বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রতিনিয়ত ভাংগনে ইছামতি ও কালিন্দী নদী \ ছোট হয়ে আসছে সাতক্ষীরা \ বাংলাদেশ হারাচ্ছে ভূ—খন্ড \ স্থায়ী সমাধান জরুরী প্রয়োজন মেগা প্রকল্প গ্রহণ \ এখনই সময় দেবহাটা সর: পাইলট হাইস্কুলের শহীদ মিনার উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণ দেবহাটা রিপোটার্স ক্লাবের শীতবস্ত্র বিতরণ দেবহাটায় তারুণ্যের উৎসব উদযাপনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শ্যামনগরে গর্ভবতী গরু জবাই \গ্রাম্যমান আদালতে ব্যবসায়ীকে জরিমানা সাতক্ষীরায় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন সাতক্ষীরায় প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম রসুলপুর জান্নাতুল ফিরদাউস কুরআনিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাদ ঢালাই উদ্বোধন ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়ায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর আবাদী জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত খুলনায় যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

ইসিতে অভিযোগের স্তুপ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৫

জিএম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ তিনশ সংসদীয় আসনের বিপরীতে সীমানা বিন্যাস চেয়ে জমা হচ্ছে অভিযোগের স্তুপ নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। এ আবেদনে ২০০১ সােলে আদলে সবাই পুরনো সীমানায় ফিরতে তাদের যুক্তি তুলে ধরার দাবি জানাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৩টি আসন থেকে অভিযোগ এসেছে কমিশনে। এখনও অনেক জেলা থেকে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এমনিই একটি জেলা যশোর—০৪ আসন। অথচ এখনো আবেদন চেয়ে কমিশন থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। বিনা—নোর্টিশে আবেদন এলেও বর্তমান কমিশন সেগুলো আমলে নিয়ে তালিকা প্রণয়ন করে পর্যালোচনা করার চিন্তা—ভাবনা করছেন। খবর নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি সূত্রের। নবম জাতীয় সংসদ (২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর) নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের আসনবিন্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। এ নিয়ে তৎকালিন ড. শামসুল হুদার কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ—অসন্তোষ ছিল সংক্ষুদ্ধ আসনগুলোর জনপ্রতিনিধি থেকে সাধারণ মানুষের। ইসি সূত্রমতে, আবেদনগুলোর যৌক্তিকতা ইসির কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হলে কয়েকটি জেলার আসন বাড়তে পারে। কমতে পারে ঢাকা মহানগরসহ কয়েকটি জেলার আসন। এক—এগারো সেনা—সমর্থিত তত্বাবধয়াক সরকার দায়িত্বে এসে কমিশন পুনগর্ঠন করেন। পুরনো কমিশন বদলে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ড. শামসুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপদেষ্টা ড. তৌওফিক এলাহীর বেয়াই সাবেক বিচারক ছহুল হুসাইন ও ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচনী আইন সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ছবিযুক্ত ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন ও সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস করেন। এই কমিশনের সময় প্রথম ঘরে বসে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) পদ্ধতিতে সীমানা বিন্যাস শুরু হয়। জনশ্র“তি রয়েছে, এই আসন বিন্যাসের টার্গেট ছিল বিএনপি—জামায়াতের ভোট ব্যাংক আসনগুলোকে ভেঙে চুরমার করা। সে সময় ১৩০টি আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। এর ফলে স্বাধীনতার পর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এলাকার মানুষ যেভাবে ভোট দিয়ে অভ্যস্ত ছিল, নবম সংসদের আগে আসন বিন্যাসে ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। অভিযোগ রয়েছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিশেষ সুবিধা দিতে সারা দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩০টি আসনে ব্যাপক রদবদল হয়। অভিযোগ উঠেছিল, বিগত সেনা সমর্থিত ঐ কমিশন বেছে বেছে বিএনপির আসনগুলো পুনর্বিন্যাস করে। সেই সময়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগকে বাড়তি সুবিধা দিতে কুমিল্লাসহ ১২টি জেলার ১০টি সংসদীয় আসন কর্তন করেছিল কমিশন। ঢাকা জেলায় ১৩টি থেকে সংসদীয় আসন করা হয় ২০টি। যে ১২টি জেলা থেকে আসন কর্তন করা তার মধ্যে ১০টি জেলায় ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির দখলে ছিল। একটি জামায়াতের আর অন্যটি ছিল আওয়ামী লীগের। এ টি এম শামসুল হুদার আমলে আসন অবিকল বহাল রেখে টুকটাক আসন বিন্যাস করে দায়িত্ব শেষ করে গেছে বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। নতুন কমিশন গঠনের পর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ২০০৮ সালের আগের সীমানা ফেরত দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে। পুরনো সীমানায় ফিরতে অভিযোগও আসছে ইসিতে। ইসির সূত্রমতে, যৌক্তিক উপায়ে সীমানা বিন্যাস হলে অনেক জেলার আসন বাড়তে পারে, কমতে পারে কিছু জেলার আসন। ২০০১ সালের বিন্যাস্ত আসনে ফিরতে বর্তমান কমিশন কাজ করছে বলে জানাগেছে। দেখা যায়, ২০০১ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় আসন ছিল ৫টি, একটি কমিয়ে ৪টি করা হয়। এই জেলার শ্যামনগর উপজেলা অখন্ড রেখে কালিগঞ্জের ৮টি ইউনিয়ন যুক্ত করে ২০০৮ সালে বর্তমান সাতক্ষীরা—০৪ সংসদীয় আসন করা হয়। আগে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা শ্যামনগর উপজেলা হিসেবে একক একটি সংসদীয় আসন করা হলে পূর্বের ন্যায় এই জেলায় একটি আসন বাড়তে পারে। বিনা—নোর্টিশে ২০০১ সালের সীমানায় ফিরতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৩ অভিযোগ জমা : ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলাকে পূর্বের ন্যায় ২০০১ সালের আদলে স্বতন্ত্র আসনের দাবিতে ইসিতে আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিন নাগরিক। সালাউদ্দিন মোল্লা তাদের যাতায়াতের অসুবিধার কথা উল্লেখ আগের মতো ঢাকা—০১ দোহার উপজেলাকে একক আসন করার দাবি জানিয়েছেন। একই ভাবে নবাবগঞ্জকে পূর্বের ন্যায় স্বতন্ত্র উপজেলা হিসেবে ঢাকা—০২ আসন চেয়ে মো. হুমায়ুন কবীর গংরা আবেদন করেছেন। বরগুনা জেলার আসন ২০০১ সালের আদলে তিনটি করার দাবি জানিয়ে পৃথক আবেদন করেছেন মো নুরুল আমীন, সাবেক বিএনপির এমপি নুরুল ইসলাম মনি, ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন ও আলহাজ্ব অধ্যাপক আবদুল মজিদ মল্লিক। পিরোজপুর—২ একাদশ জাতীয় সংসদের ন্যায় ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও ইন্দুরকানী নিয়ে পিরোজপুর—২ আসন করার আবেদন জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আসনের ১০জন বাসিন্দা। এরা হলেন মো মেজবাউদ্দিন, মশিউর রহমান, মাহিবুল হোসেনগং। মানিকগঞ্জ জেলার একটি কমিয়ে ৩টি করা হয়; আগের মতো ৪টি আসন পুর্নবহালের দাবিতে ২০জন নাগরিক আবেদন করেছেন, তাদের মধ্যে আ্যাড আমজাদ হোসেন, মোকছেদুর রহমান, সত্যেন কান্ত পন্ডিত ও ফজলুল হক গং। পূর্বের ন্যায় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলাকে একক সংসদীয় আসন করার দাবি জানিয়ে আবদুল ওয়াহেদ নামে একজন আবেদন করেছেন। এছাড়া আবেদন জমা পড়েছে ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া, নারায়নগঞ্জ, রাজবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও পিরোজপুর সংশ্লিষ্ট জেলা থেকেও। আবেদন জমা পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, আমরা সীমানা পুনবিন্যাস করার জন্য এখনও কোন বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। এর পরও এখন পর্যন্ত ৬৩টি বিভিন্ন আসন থেকে সংক্ষুদ্ধরা আবেদন জানিয়েছেন। আমরা তাদের আবেদনগুলো শাখাকে কম্পাইল করার জন্য নিদের্শনা দিয়েছি। এই আবেদনগুলোর বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেগুলোও সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এটিএম শামসুল হুদার পথ অনুসরণ করে ২০১৩ সালে এসে ৫০টি আসনে, ২০১৮ সালে এসে ২৫টি আসনে সর্বশেষ ২০২৩ সালে ১০টি আসনে পরিবর্তন এনেছিল আওয়ামী লীগের আমলে গঠিত কমিশনগুলো। এসব আসন বিন্যাসের ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের আলোচনা সামনে এসেছে। বিএনপি বলেছে, ১৯৮৪ সালে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করে ৮৬, ৯১, ৯৬, ২০০১ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেটাই ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com