এফএনএস এক্সক্লুসিভ: কর্মে তীব্র মৃত্যুঝুঁকি থাকলেও খুবই স্বল্প ঝুঁকিভাতা পান ফায়ার সার্ভিস কমীর্রা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৪৭ জন কর্মী নিহত হয়েছেন আর অগণিত আহত হয়েছেন। সর্বশেষ ২৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ে আগুন নেভানোর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মম সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৪ বছরের এক চৌকস ফায়ারফাইটার। বিগত সরকারের আমলে ২০১৮ সালে ফায়ার সার্ভিস কমীর্দের যে ঝুঁকিভাতা নির্ধারণ করা হয়েছিল, দীর্ঘ ৬ বছর পরেও একই ঝুঁকিভাতা নিয়ে কাজ তারা করছেন। তাছাড়া অপারেশনাল কাজে গেলেও ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো ঝুঁকিভাতা পান না। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আগুন নেভানোর কাজে সরাসরি যুক্ত ১৭ গ্রেডের একজন ফায়ার সার্ভিস সদস্য চাকরির বয়স হিসেবে সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকা পর্যন্ত ঝুঁকিভাতা পান। ১৬ গ্রেডের একজন সদস্য চাকরির বয়স হিসেবে সর্বনিম্ন ১৬০০ থেকে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত ঝুঁকিভাতা পান। ১৫ গ্রেডের একজন সদস্য চাকরির বয়স হিসেবে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত ঝুঁকিভাতা পান। ১৪ গ্রেডের একজন সদস্য চাকরির বয়স হিসেবে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত, ১৩ গ্রেডের একজন সদস্য চাকরির বয়স হিসেবে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত, ১২ গ্রেডের একজন সদস্য চাকরির বয়স হিসেবে সর্বনিম্ন ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা, ১১ গ্রেডের একজন সদস্য চাকরির বয়স হিসেবে সর্বনিম্ন ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত এবং ১০ গ্রেডের একজন সদস্য চাকরির বয়স হিসেবে সর্বনিম্ন ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত ঝুঁকিভাতা পান। সূত্র জানায়, দেশের ক্রান্তিলগ্নে ঊর্ধ্বতন থেকে শুরু করে সব স্তরের সদস্য এবং কর্মকর্তারাই ফায়ার ফাইটার। তখন কারোর বসে থাকার সুযোগ নেই। একসঙ্গে সবাই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অপারেশনাল কাজে গেলেও ১০ গ্রেডের ওপরে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য কোনো ঝুঁকিভাতা নেই। অথচ ঝুঁকিভাতা পেলে ওসব কর্মকর্তা আরও উৎসাহিত হতো। সূত্র আরো জানায়, ফায়ার ফাইটাদের কেউ কেউ মারা গেছেন অগ্নিনির্বাপণ নিয়ে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায়, কেউ মারা গেছেন অগ্নিনির্বাপণের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, কেউ মারা গেছেন আগুন নেভানোর সময় দেয়ালচাপা পড়ে, কেউ মারা গেছেন অগ্নিনির্বাপণের সময় বিস্ফোরণে আর কেউ মারা গেছেন ডুবুরির কাজ করাকালীন পানির নিচে আটকে পড়ে। ২০২২ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় আগুন নির্বাপণের সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান কুমিরা ফায়ার স্টেশনের লিডার মিথু দেওয়ান, মো. এমরান হোসেন মজুমদার, নিপন চাকমা, ফায়ার ফাইটার মো. রানা মিয়া, আলাউদ্দিন, মো. শফিউল ইসলাম, গাউছুল আজম, মো. শাকিল তরফদার, রমজানুল ইসলাম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, রবিউল ইসলাম, মো. ফরিদুজ্জামান এবং নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্ট মনিরুজ্জামান। ২০২৩ সালে অগ্নিনির্বাপণে যাওয়ার পথে গাড়ি চালাতে চালাতেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের ড্রাইভার জাহাঙ্গীর হোসেন। ২০২৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছ কাটার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান খাগড়াছড়ি ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো. রাসেল হোসেন। সর্বশেষ সচিবালয়ে আগুন নেভানোর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মম সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নয়ন। এদিকে এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম জানান, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডসহ বহুমাত্রিক দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে। তাই ঝুঁকিভাতার পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। এতে একজন ফায়ার কর্মী নিজেদের নিরাপদ মনে করবে, যা কাজের উৎসাহ জোগাবে।