এফএনএস: বাংলাদেশ—ভারত সম্পর্কের কৌশলগত গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। নিজ নিজ স্বার্থের জন্য বাংলাদেশ—ভারতের মধ্যে কোনো বৈরিতা হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। গতকাল সোমবার দিল্লিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এ মন্তব্য করেন। স¤প্রতি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার—উজ—জামান ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্বের বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে দেওয়া—নেওয়ার সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে। ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা অনেক দিক থেকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। আবার ভারতও আমাদের কাছ থেকে সুবিধাও পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। জনগণ যেন কোনোভাবেই মনে না করে ভারত বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করছে বা এমন কিছু করছে, যা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী। জেনারেল ওয়াকার—উজ—জামানের এসব কথারই প্রতিফল ঘটিয়েছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। যেখানে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক কৌশলগত গুরুত্ব স্বীকার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ… আমরা প্রতিবেশী, আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে এবং একে অপরকে বুঝতে হবে, এবং নিজ স্বার্থে বাংলাদেশ—ভারতের মধ্যে কোনো বৈরিতা নয়। জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী আশ্বস্ত করেছেন, বর্তমানে কোনো দিক থেকেই কোনো ঝুঁকি নেই। তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে কোনো ঝুঁকি দেখা যায়নি। এ সময় তিনি ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করেন। জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, এই পরিবর্তনের সময়ও আমি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। এরপর গত ২০ নভেম্বরও আমাদের মধ্যে একটা ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই চলছে। সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী রয়েছে। এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো এবং নিখুঁত। ছাত্র—জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে পট পরিবর্তনের সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার—উজ—জামানের সঙ্গে ‘সার্বক্ষণিক যোগাযোগ’ রেখেছিলেন বলে জানান ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ছাত্র—জনতার ৩৬ দিনের অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়। সরকার থেকে উৎখাত হন প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে ‘বাংলাদেশ—ভারতের সম্পর্কে তিক্ততা শুরু’ এমন সংবাদ প্রতাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, আজ পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে কোনো ঝুঁকি দেখা যায়নি। আমার সে দেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ আছে। বাংলাদেশে যখন পালাবদল ঘটল, তখেনা আমরা নিজেদের মধ্যে সব সময় যোগাযোগ রেখে চলছিলাম। এরপর গত ২০ নভেম্বরও আমাদের মধ্যে একটা ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই চলছে। শেখ হাসিনা উৎখাত হওয়ার পর পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ভারতে অবস্থান করছেন। ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার প্রক্রিয়াটি দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় রেখেই সম্পন্ন হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বাংলাদেশে তার কাউন্টারপার্টের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, উনি (বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার—উজ—জামানে) যেমন বলেছেন ভারত তাদের জন্য স্ট্র্যাটেজিক (কৌশলগত) দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কথাটা আমাদের দিক থেকেও সত্যি। বাংলাদেশ আমাদের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ… আমরা প্রতিবেশী, আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে এবং একে অপরকে বুঝতে হবে, এবং নিজ স্বার্থে বাংলাদেশ—ভারতের মধ্যে কোনো বৈরিতা নয়। উপেন্দ্র দ্বিবেদী আরও বলেন, যদি আপনারা (দুই দেশের) সম্পর্কের কথা বলেন, সেটা ওখানে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত সম্ভব নয়। তবে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক একদম ঠিক আছে, সব মসৃণভাবে চলছে।