বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সখিপুর ইউনিয়নে তারুণ্যের ভাবনা বিষয়ক কর্মশালা “মাসজিদে কুবা” নামাজ আর ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মানবতার মনোমুগ্ধতার উচ্চতায় দেবহাটার পাঁচটি ইউনিয়নে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন চাপের মুখে পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ আশাশুনি তথ্য অধিকার বুথ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রশিক্ষণ সম্পন্ন সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ নূরনগরে জামায়াতের সেটআফ প্রোগ্রাম ও মতবিনিময় শীতার্তদের মাঝে জামায়াতের কম্বল বিতরণ

বিপুলসংখ্যক গাড়ির ইঞ্জিন ভেজাল জ্বালানি তেলে নষ্ট হলেও পর্যাপ্ত নজরদারি নেই

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: দেশে বিপুলসংখ্যক গাড়ির ইঞ্জিন ভেজাল জ্বালানি তেলে নষ্ট হলেও তা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত নজরদারি নেই। মূলত ভেজাল জ্বালানি তেল ব্যবহারের কারণেই গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ছে। প্রতিটি গাড়ি তৈরির সময়ই এর ইঞ্জিনে ব্যবহার্য জ্বালানি তেলের মান নির্ধারণ করে দেয়া থাকে। এর চেয়ে নিম্নমানের তেল ব্যবহার হলে ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশে জ্বালানি তেল পরিশোধনের সময় সঠিকভাবে মান রক্ষা না করার অভিযোগ রয়েছে। আর বাজারে যে তেল পাওয়া যায়, সেখানেও বিভিন্নভাবে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। ভুক্তভোগী, মেকানিক এবং পেট্রোল পাম্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রিকন্ডিশনড গাড়ির আয়ুষ্কালে ভেজাল তেল ব্যাপক মাত্রায় ভূমিকা রাখছে। জাপান থেকে আনা টয়োটার রিকন্ডিশন গাড়িগুলোর একেকটি ইঞ্জিন সাধারণত পাঁচ লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত চলার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে আনার পর তার অনেকগুলোই আড়াই থেকে তিন লাখ কিলোমিটারের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। ভেজাল তেলের ব্যবহারেই এভাবে গাড়ির মাইলেজ কমে যাওয়া ও তাতে তারতম্য দেখা দেয়ার বড় একটি কারণ। যদিও দেশে ভেজাল জ্বালানি তেলের বিপণন ঠেকাতে প্রায় সময়ই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়। প্রতি মাসেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কোনো না কোনো পেট্রোল পাম্পকে সেজন্য জরিমানাও করা হচ্ছে। তবে পেট্রোল পাম্প মালিকদের দাবি, ভেজাল জ্বালানি তেল বিপণনে পাম্পগুলোর কোনো হাত নেই। পাম্পে ভেজাল মেশানোর বা খোলাবাজার থেকে তেল কেনার সুযোগ নেই। ডিপো থেকে জ্বালানি তেলবাহী গাড়িগুলো পাম্পে রওনা দেয়ার সময় তাতে ভেজাল মেশানো হয়ে থাকতে পারে। সূত্র জানায়, জ্বালানি তেল ডিপো থেকে পেট্রোল পাম্পে নেয়ার সময় মাঝপথে সবচেয়ে বেশি ভেজাল মেশানো হয়। আবার বেসরকারি পরিশোধনাগারে কনডেনসেট নিয়ে যাওয়ার পর সেখানেও ভেজাল মেশানোর অভিযোগ রয়েছে। এ পুরো প্রক্রিয়ায় সরকারি—বেসরকারি একটি নেটওয়ার্ক সক্রিয়। কারণ জ্বালানি তেলে ভেজাল মেশানো এককভাবে কোনো পক্ষের জন্য সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বড় একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার কনডেনসেটের দাম ৪০ টাকার নিচে। আর ডিজেল বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১০৪ টাকায়। তাছাড়া প্রতি লিটার পেট্রোল ১২১ এবং অকটেন ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে অনুযায়ী প্রতি দশ লিটার জ্বালানি তেলের মধ্যে ১ লিটার কনডেনসেট মেশানো গেলে পেট্রোল পাম্প ও খোলাবাজারের বিক্রেতাদের লিটারে জ্বালানি তেলে অন্তত ১০ টাকা বাড়তি মুনাফার সুযোগ রয়েছে। আবার ১০০ লিটার জ্বালানি তেলের মধ্যে ১০ লিটার কনডেনসেট মেশালে তা সহজে ধরার সুযোগও নেই। সূত্র আরো জানায়, দেশে প্রতি বছর অন্তত ৬৫ থেকে ৬৭ লাখ টন জ্বালানি তেল বিক্রি হয়। ২০২৩—২৪ অর্থবছরে দেশে জ্বালানি ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৪২ লাখ ৫৪ হাজার টন। এছাড়া পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৪ লাখ ৩০ হাজার ও ৩ লাখ ৮৭ হাজার টন। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নির্ধারিত মান অনুযায়ী বিপিসি বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি ও বাজারজাত করে। তবুও বাজারে কোনো না কোনো উপায়ে জ্বালানি তেলে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। বিপিসির কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহ করার জন্য দেশে বেসরকারি ১১টি ফ্র্যাকশনেশন প্লান্ট রয়েছে। ওসব প্লান্ট দেশের বাইরে থেকে কনডেনসেট আমদানি করে। তাদের কাছ থেকে জ্বালানি তেল কিনে তা পরীক্ষার পর বাজারে ছাড়ে বিপিসি। তবে দেশী গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদিত কনডেনসেট পরিশোধন করে যে জ্বালানি তেল পাওয়া যায়, তার কোথাও থেকে ভেজাল মেশানো হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে বিপিসি সংশ্লিষ্টরা সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারছে না। এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে ভেজাল জ্বালানি তেলের বিক্রি বন্ধে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। খাদ্যের মতো গুরুত্ব দিয়ে জ্বালানি তেলের মানও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশের বাইরে ৯৯ মানের অকটেনও পাওয়া যায়। অকটেনের মান ৯৫ থাকলেই তা গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য নিরাপদ। দেশে এ মানের অকটেন ব্যবহার করার কথা থাকলেও তা হয় না। জ্বালানি তেলে একটির মধ্যে আরেকটি ভেজাল দিয়ে অনেক আগে থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। এটি বন্ধে কঠোর পর্যবেক্ষণ থাকা জরুরি। অন্যদিকে এ বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান জানান, বিপিসি যেসব জ্বালানি পণ্য আমদানি ও সরবরাহ করে তা বিএসটিআই অনুমোদিত মানের মধ্যেই রয়েছে। এছাড়া ডিপোগুলোয় জ্বালানি তেল পরীক্ষার জন্য অ্যানালাইজার রয়েছে। কিন্তু ডিপো থেকে তেল বের হওয়ার পর কোনো কোনো জায়গা থেকে ভেজাল তেল মিশ্রণ হচ্ছে। বিএসটিআইয়ের সহযোগিতা নিয়ে বিপিসি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ কোর্ট পরিচালনা করে থাকে। সেখানে অনেককে জরিমানাও করা হয়। ভেজাল তেল প্রতিরোধে জ্বালানি বিভাগ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ হয়েছে। এখন মাঠ পর্যায়ে ভেজাল তেলবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল জানান, বিভিন্ন সময় আকস্মিকভাবে পেট্রোল পাম্পগুলোয় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। তারা অভিযান চালিয়ে ভেজাল তেল পেলে জরিমানা করছে। অথছ পাম্প মালিকরা ওই তেল ডিপো থেকে নিয়ে আসেন। ফলে জ্বালানি তেলে সমস্যা দেখা দিলে সেটি ডিপোয় সমস্যা থাকতে পারে। পাম্প মালিকদের তো ডিপোর বাইরে থেকে জ্বালানি তেল কেনার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) জানানো হলেও বিষয়টির কোনো সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারেনি। বরং মাসের পর মাস পাম্প মালিকরা ভ্রাম্যমাণ এ অভিযানে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com