এফএনএস এক্সক্লুসিভ : বাজারে যখন চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী, তখন হঠাৎই চলতি মাসে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)—এর ফ্যামিলি কার্ডের পণ্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে চাল বিক্রি। ফলে নিম্নআয়ের কোটি পরিবার বিপাকে পড়েছে। টিসিবি থেকে বর্তমানে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্নআয়ের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে নিয়মিত থাকে ভোজ্য তেল, ডাল, চিনি। কখনো কখনো পেঁয়াজ ও চাল সরবরাহ করা হয়। রমজান মাসে যোগ হয় ছোলা ও খেজুর। এতোদিন ফ্যামিলি কার্ড হাতে লেখা ছিলো। বর্তমানে স্মার্ট ডিজিটাল কার্ড চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৭ লাখ গ্রাহক স্মার্টকার্ড পেয়েছে। আরো ছয় লাখ কার্ড প্রস্তুত হচ্ছে। তবে হাতে লেখা কার্ড পরিবর্তন করে স্মার্টকার্ড চালুর কারণে জানুয়ারি মাসে টিসিবির কোনো পণ্যই পাবে না অন্তত ৩৭ লাখ কার্ডধারী। এ মাসের মধ্যেই সেগুলো গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে যাবে। টিসিবি ও খাদ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টিসিবিকে খাদ্য অধিদফতর থেকে চাল সরবরাহ না করায় টিসিবি চাল বিক্রি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। খাদ্য অধিদফতর ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল সরবরাহ করেছে। জানুয়ারিতে চাল সরবরাহ না পাওয়ায় চলতি মাসে টিসিবিতে চাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে চাল পাওয়া গেলে পুনরায় তা সরবরাহ শুরু করা হবে বলে জানানো হয়েছে। চাল কেনার জন্য বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড় না করায় খাদ্য অধিদফতর চাল সরবরাহ করতে পারেনি। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সার্বিক নির্দেশনায় টিসিবি নিম্নআয়ের এক কোটি উপকারভোগী কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভতুর্কি মূল্যে টিসিবির পণ্য চাল, মসুর ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রি করে আসছিল। বিগত ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে টিসিবি প্রতি ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি চাল সরবরাহ করে আসছিল। আর খাদ্য অধিদফতর ওই চাল সরবরাহ করতো। সূত্র জানায়, বন্ধ হয়ে গেছে টিসিবির বিশেষ কর্মসূচি ট্রাকসেলও। সরকারের নির্দেশনায় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রাকসেলে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। এখন তা বন্ধ। তবে সরকারের নির্দেশনা পেলে পুনরায় তা চালু হবে। খাদ্য অধিদফতর প্রতি মাসে টিসিবিকে ৫০ হাজার টন চাল সরবরাহ করে। তবে ওই বরাদ্দের জন্য খাদ্য অধিদফতর বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটে কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। ফলে খাদ্য অধিদফতর আর চাল সরবরাহ করতে পারছে না। চালের মূল্য পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় সরবরাহ আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে টিসিবির চাল বিক্রি বন্ধ থাকলেও ভোজ্য তেল ও ডাল সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চলতি মাসে টিসিবি এক কোটি উপকারভোগীর কাছে তিন পণ্য চিনি, সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল বিক্রি শুরু করবে জানুয়ারি মাসে কার্ডধারীরা দুই লিটার ভোজ্য তেল, দুই কেজি মসুর ডাল এবং এক কেজি চিনি কিনতে পারছে। সূত্র আরো জানায়, খাদ্য মন্ত্রণালয় চাহিদা মেটাতে খোলাবাজারে বিক্রির জন্য এক হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা এবং চাল আমদানির জন্য তিন হাজার ৩৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। অথচ গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে মোটা চালের দাম কেজি প্রতি তিন—চার টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চাল ৬০—৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৫৪—৫৫ টাকা। এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিতরণ বিভাগের পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসবে সেভাবেই বাস্তবায়ন করা হয়। নির্দেশনা আসেনি, তাই চাল সরবরাহ করা হয়নি।