শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

পাকিস্তানে নাটকের সমাপ্তি হতে পারে আজ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২

এফএনএস : তারকা ক্রিকেটার। কিংবদন্তি অধিনায়ক। ক্রিকেটে তার সম্পর্কে রূপকথার শেষ নেই। এমনটাও বলা হতো, তিনি চাইলে ১১টি হরিণকেও নেতৃত্ব দিতে পারতেন। শেষ মুহূর্তের চালে কত ম্যাচ যে বের করে নিয়ে এসেছেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কখনও ওয়াসিম আকরাম, কখনও জাভেদ মিয়াঁদাদ ছিলেন তার তুরুপের তাস। ক্রিকেটতো কত তারকাই দেখেছে। কিন্তু ইমরান খানের মতো চরিত্র! খুব বেশি নয়। রাজনীতিতে তার উত্থান নাটকীয় নয়। মাঠে থেকেছেন দীর্ঘদিন। ধীরে ধীরে জমিন তৈরি করেছেন। শেষ পর্যন্ত বসেছেন মসনদে। অনেক আশা দিয়েছিলেন। তার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিন্তু সম্ভবত পাকিস্তানে এক ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন তিনি। সে যাই হোক। খুব নাটকীয় কিছু না ঘটলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম দফায় মেয়াদ আজই শেষ হচ্ছে কিং খানের। জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। যে ভোটে তার জেতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যদিও ইমরান খান বলেছেন, শেষ বল পর্যন্ত লড়বেন তিনি। বেশ কিছুদিন থেকেই ছিলেন চাপে। বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব। নিজ দলের ভেতরে বিদ্রোহ বা বিশ্বাসঘাতকতা। জোট সঙ্গীদের ত্যাগ। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। সবমিলিয়ে একেবারে কোণঠাসা। এরইমধ্যে ৩রা এপ্রিল রীতিমতো চমক দেখালেন। বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেন তার অনুগত ডেপুটি স্পিকার। তার পরামর্শে প্রেসিডেন্ট ভেঙে দেন জাতীয় পরিষদ। ইমরানের রিভার্স সুইংয়ে রীতিমতো তাজ্জব বনে যান রাজনীতির ঝানু পণ্ডিতরাও। তখনই অবশ্য প্রশ্ন ওঠে বলটি কি ‘নো’ ছিল? সেদিন সন্ধ্যায়ই মঞ্চে আবির্ভূত হন উমর আতা বান্দিয়াল। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি। ইস্যু করেন সুয়োমটো রুল। সাফ জানিয়ে দেন, সংবিধানের ঊর্ধ্বে কেউ নন। পরীক্ষা করা হবে ডেপুটি স্পিকারের রুলিং ও প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত। পাঁচদিন শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রাতে রায় ঘোষণা করে তার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ। পুরো খেলাটিই পাল্টে দেয়া হয়েছে। অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে ডেপুটি স্পিকারের রুলিং। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত বাতিল করে পুনর্বহাল করা হয়েছে জাতীয় পরিষদ। বিবিসি’র উর্দু বিভাগের মতে, এই রায়ের অর্থ হলো বিরোধীদল শনিবার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট করে তাকে পরাজিত করবেন এবং তাকে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে। পাকিস্তানের আইনবিদরা এ রায়কে বলছেন ঐতিহাসিক। সংবাদমাধ্যমের ভাষায়, সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষা করা হয়েছে। বিরোধিরা উচ্ছ্বসিত। প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই গেম চেঞ্জার উমর আতা বান্দিয়াল? পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক সংকটকে ঘিরে যে নাটকীয়তা চলছে তার প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছেন প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল। এ মামলার শুনানি চলাকালে বারবারই স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেছেন, ডেপুটি স্পিকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। বিচারের ক্ষেত্রে বেঞ্চের অন্য চার বিচারপতিও তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। এই ঘটনার মাত্র দু’মাস আগে তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। নিজের বিচক্ষণতা এবং সুষ্ঠু মানসিকতার জন্য বহু আগেই নাম করেছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর তিনি বাড়তি চাপে পড়তে যাচ্ছেন তা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। কর্মক্ষেত্রে তার সহকর্মীদের ভাষায়, বিচারপতি বান্দিয়াল অত্যন্ত কোমলভাষী। তার সময়ে বেঞ্চ এবং বারের মধ্যে সম্পর্ক হবে আন্তরিক এ আশা ছিল সবার। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কয়েকবারই সরকারগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সে ধারাবাহিকতাই যেন রক্ষা করলেন বিচারপতি বান্দিয়াল। বান্দিয়াল ১৯৮৩ সালে লাহোর হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়াতেন। নিজের জীবনে অনেক অল্প সময়েই উত্থান হয় বান্দিয়ালের। লাহোরে আইনি চর্চা করার সময় বিচারপতি বান্দিয়াল প্রধানত বাণিজ্যিক, ব্যাংকিং, ট্যাক্স এবং সম্পদ বিষয়ক মামলা দেখাশোনা করেছেন। প্রথম দিকে তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বিরোধ মোকাবিলায় সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর তিনি লাহোর হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৭ সালের নভেম্বরে সাবেক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফের সময়ে প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অর্ডারের অধীনে যারা শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তাদের একজন হচ্ছেন বান্দিয়াল। ২০১২ সালে লাহোর হাইকোর্টের ৪১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৪ সালের ১৬ই জুন পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। এরপরে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। বিচারপতি বান্দিয়ালের জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর লাহোরে। তিনি কোহাট, রাওয়ালপিণ্ডি, পেশোয়ার এবং লাহোরে বিভিন্ন স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর ক্যামব্রিজ থেকে ল’ ত্রিপোস ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যারিস্টার অ্যাট ল’ সম্পন্ন করেছেন লন্ডনের অভিজাত লিঙ্কনস ইন থেকে। এ বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেন বান্দিয়াল। এর এক মাসের মাথায়ই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধীরা। প্রথমে সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকলেও, একের পর এক নাটকীয়তায় চাপে পড়েন খান। সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি তোলেন ইমরান খান। প্রথমে দেশের নাম না বললেও পরে সরাসরি আঙ্গুল তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। একটি চিঠিসহ বেশ কিছু ঘটনার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রমাণের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি। এই রাজনৈতিক দোলাচলের মধ্যেই দলের ২৪ আইনপ্রণেতা বিদ্রোহ করে বসেন। ক্ষমতাসীন জোট ছেড়ে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেয় মিত্র রাজনৈতিক দলও। এক পর্যায়ে অনাস্থা ভোটে তার পরাজয় হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যাপার। সেটি উতরে গিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ইমরান খান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইমরানকে থামালেন প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল। আবির্ভূত হলেন গেম চেঞ্জারের ভূমিকায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com