এফএনএস বিদেশ : পূর্বাঞ্চলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর (ডিআর) অবরুদ্ধ শহর গোমায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত এবং প্রায় ৩৭০ জন আহত হয়েছে। গত সোমবার হাসপাতাল সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। কঙ্গোর সেনাবাহিনী রুয়ান্ডার সেনাবাহিনী সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী এম২৩ বাহিনীকে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। এ সংঘাতের কারণে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলমান সংঘাত আরো খারাপ হয়েছে। এদিকে এম২৩ সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্সের নেতা কর্নেইল নাঙ্গা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘তার বাহিনী গোমার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ শুরু করেছে। তবে সময় লাগছে।’এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কামান এবং গুলির শব্দ ডি আর কঙ্গোর খনিজসমৃদ্ধ পূর্বের প্রধান কেন্দ্রজুড়ে শোনা যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বেশ কয়েকটি পাড়ার বাসিন্দারা ছোট অস্ত্রের গুলি এবং কিছু বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। বিশেষ করে বিমানবন্দরের কাছে, যা এখনো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী এবং সরকারি সেনাদের হাতে রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিমানবন্দরের কাছে গোমার উত্তর মাজেঙ্গো পাড়ার একজন বয়স্ক নারী রয়টার্সকে বলেছেন, ‘গত রাতে কিছুটা শান্ত হওয়ার পরে মধ্যরাতে আবার গুলি শুরু হয়।’ মাজেঙ্গোর আরেক বাসিন্দা রাতভর এবং গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গুলিবর্ষণের খবর নিশ্চিত করেছেন। গোমার বাসিন্দা লুসি টেলিফোনে বলেন, ‘আমরা আমাদের ঘরে লুকিয়ে আছি। আমরা ভয় পাচ্ছি। আমাদের বাড়ির বাইরে গুলি চালানোর শব্দ শুনতে পাচ্ছি, আমরা বের হতে পারছি না।’ গত সোমবার শহরের হাসপাতালগুলোতে সংঘর্ষে আহত ৩৬৭ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এএফপির যাচাই করা তথ্যে জানা গেছে, কমপক্ষে ১৭ জন নিহতের তালিকায় রয়েছেন। উত্তর কিভু প্রদেশের আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রধান মরিয়াম ফ্যাভিয়ার বলেছেন, ‘আমাদের সার্জিক্যাল দলগুলো এখন আহতদের বিশাল স্রোত মোকাবেলায় দিন—রাত কাজ করছে। আহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।’ রুয়ান্ডা সীমান্তে পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তুতসি জাতির নেতৃত্বাধীন এম২৩ সশস্ত্র গোষ্ঠীর পেছনে রুয়ান্ডার সমর্থন রয়েছে। গত রবিবার রাতে এম২৩ সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং রুয়ান্ডার সেনারা শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ করে এবং কঙ্গোর গোমা শহর দখলে নেয়, তবে কতটা অংশ কঙ্গোর নিয়ন্ত্রণে ছিল তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষের শহর গোমায় আক্রমণ শুরুর পরে কয়েক হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। গোমা শহরের লোক ছাড়াও প্রাদেশিক রাজধানীতে যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত প্রায় একই সংখ্যক লোক। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এবং রুয়ান্ডার পল কাগাম কঙ্গোর সা¤প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য কথা বলেছেন। তারা যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন। উল্লেখ্য, এই সপ্তাহে ৯ জন দক্ষিণ আফ্রিকান শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন গত রোববার সংঘর্ষে জাতিসংঘের ১৩ শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘ মিশন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। সংঘাতে সেনাদের জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ায় সমালোচকরা দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এ ছাড়া রামাফোসা এবং কাগামে কথা বলার পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের জারি করা বিবৃতিতে মৃত্যুর কোনো কথাই উল্লেখ করা হয়নি। বছরের পর বছর সুপ্ত থাকার পর ২০২১ সালের শেষের দিকে এম২৩ সশস্ত্র গোষ্ঠী আবার জেগে ওঠে এবং উত্তর কিভু প্রদেশের বিশাল অংশ দখল করতে শুরু করে। তবে কঙ্গোর সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই এই বছরের শুরু থেকে তীব্রতর হয়েছে। এম২৩ রুয়ান্ডা—সমর্থিত গোষ্ঠীটি পূর্ব থেকেই গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে বিদ্রোহ করে আসেছে। খনিজসম্পদ লুট করার উদ্দেশ্যে কঙ্গোর বিস্তৃত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেই রুয়ান্ডা এম২৩ গোষ্ঠীকে সহায়তা করছে বলে দাবি করেছে কঙ্গো। কঙ্গো সরকার বলেছে, গোমায় রুয়ান্ডার সেনাবাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। তবে কঙ্গোর সেনারা গণহত্যা প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স