শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন

কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: কোনো পদক্ষেপই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। সরু থেকে মোটা সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। গেল একমাস ধরেই সব জাতের চাল কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ১২ টাকা। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুসারে মিনিকেট চাল মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায় নাজিরশাইল জাতের চালের খুচরামূল্য মানভেদে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। মাঝারি বা ব্রি—২৮ ও পায়জাম জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়। এ অবস্থায় বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে ৭ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ টন গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। এরমধ্যে রয়েছেÑ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়া, হাট—বাজার—সড়কে অব্যাহত চাঁদাবাজি, আমদানি করা চাল না আসা, সরকারের সংগ্রহ টার্গেট ফেল করা, কয়েক স্তরে হাতবদল, সরকারি মজুত কমে যাওয়া। সূত্র জানিয়েছে, চালের উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলে ধানসহ চালের দাম বেড়েছে। সরকারি ভাষ্যমতে সমপ্রতি বিভিন্ন কারণে চালের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ১২ শতাংশ। এটি যদি সত্য হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বাড়ার কথা। কারণ বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহন খরচ বেড়েছে, কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। বেড়েছে কৃষি যন্ত্রপাতির দাম। বেড়েছে সার, কীটনাশকের দামও। আরও বেড়েছে ক্ষেতে পানি সরবরাহ দেওয়ার ডিজেল—কেরোসিন ও বিদ্যুতের দাম। তাছাড়া সার্বিকভাবে বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। এসব কারণে চালের দাম বেড়েছে। কারণ কৃষককে ধান বা চাল বিক্রি করেই সারা বছর জীবন চালাতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই বাজার থেকে যখন বেশি দাম দিয়ে চাল ছাড়া অন্য পণ্য কিনবে, তখন সেসব পণ্য কেনার অর্থ ওই কৃষককে ধান ও চাল বিক্রি করেই উপার্জন করতে হবে। এছাড়া চালের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসার পেছনে রয়েছে চাঁদাবাজি। সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বতীর্ সরকারের নানামুখী উদ্যোগেও কমেনি চাঁদাবাজি। হাতবদলের পরে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে চাঁদাবাজরা। যার প্রভাব পড়ছে বাজারগুলোতে। ফলশ্রম্নতিতে বাড়ছে চালের দাম। হাসিনা সরকারের পতনের পর মাসখানেক বন্ধ থাকলেও চাঁদাবাজরা ভোল পাল্টে আবার মাঠে সক্রিয় হয়েছে। এ কারণে চালসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যই চড়া দামে বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। একজন ব্যবসায়ীকে হাটে, বাজারে, সড়কে, মহাসড়কে, আড়তে, পাইকারি বাজারে, খুচরা বাজারে এবং মহল্লার দোকানে পর্যন্ত বিভিন্ন কায়দায় চাঁদা দিতে হচ্ছে। এ চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন আবার আগের অবস্থায় চাঁদাবাজ ও সিন্ডিকেট ফিরে এসেছে। শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতবদল হয়েছে মাত্র। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজার সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বাড়ে। এদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হওয়ায় সরকারের সিদ্ধান্তের পরেও চাল আমদানি পরিস্থিতি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। ফলে প্রভাব পড়ছে চালের বাজারে। কয়েক স্তরে হাতবদলের কারণে বাজারে চালের দাম বাড়ে। জানা গেছে, উৎপাদনকারী কৃষকের মাঠ থেকে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ভোক্তার হাতে চাল তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েক স্তরে হাতবদল হয়। প্রত্যেক স্তরেই মুনাফা লাভের কারণে সার্বিকভাবে বেড়ে যায় চালের দাম। সরকারের কোনও উদ্যোগেই হাতবদলের এই স্তর সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না। কৃষকের গোলার ধান মিলারদের কাছে যায়। সেখান থেকে মোকামের আড়তদার, মোকামের আড়তদার থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের চালের আড়তদার, সেখান থেকে হাতবদল হয়ে পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী, সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ী হয়ে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে হয় চাল। পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে প্রত্যেক স্তরেই কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা মুনাফা ধরে হাতবদল হওয়ার কারণে প্রতি কেজি চালের দাম বাড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ফলে ৫০ টাকার চালের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এদিকে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসার আরেকটি কারণ হলো সরকারি মজুদ কম হওয়া। এ বিষয়ে অন্তর্বতীর্ সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের ভাষ্য হলো, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চাল সংগ্রহে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এদিকে, চালের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি চলতি সপ্তাহে কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও সাংবাদিকদের বলেছিলেন। তিনি সরু ও মোটা চালের দাম বাড়ার তথ্য দিয়েছিলেন। দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের হাত থাকার কথাও বলেন তিনি। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বতীর্ সরকার গত ৩১ অক্টোবর আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে। কিন্তু চালের বাজারে তার দৃশ্যমান প্রভাব নেই। কয়েক মাস ধরে চড়ে থাকা চালের বাজারে স্থিতি ফেরাতে গত ৭ জানুয়ারি ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন—বাসমতি কেনার প্রস্তাবেও অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর ভারত থেকে আসে ২৪ হাজার ৬৯০ টন সিদ্ধ চাল। ১২ জানুয়ারি আসে ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চালের আরেকটি চালান। কিন্তু এসব উদ্যোগ চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারেনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com