ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি \ যার বুকে অবারিত সবুজের ঝর্ণাধারা চারপাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর কুল কুল ধনী। মাথার উপরে সুবিস্তৃত আকাশ, কখনো বা এখানে ঘন কালো মেঘ কখন বা সূর্যের চোখ ঝলসানো আলোক আভা। আবার কখনো বা রাতের কালো আকাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার কখনো বা পূর্ণিমা রাতে ভরা জোছনার কুসুম কোমল আলোর ঝলকানি মানব মনে সৃষ্টি করে প্রেমের উষ্ণ অনুভূতি। তাই যেন ভ্রমন পিপাসু মানুষ এক ফুসরত সময় পেলেই সুন্দরবনের এই ভূস্বর্গে নিজেকে অবগাহন করে নেয়। প্রেমিক যুগলের এই আতুড় ঘর হাজারো কবির শত কবিতার উৎস বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা বিধৌত সুন্দরবন যেন চির সুন্দর। তার অনন্ত চিরযৌবনা সৌন্দর্য্য হাতছানি দিয়ে ডাকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ কে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ও তার এ সৌন্দর্যে্য মুগ্ধ, বিমোহিত। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে কার না মন চায়। তাই সৌন্দর্যের এই লীলাভূমির ডাকে সাড়া দিয়ে দিনে দিনে বাড়ছে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সংখ্যা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেল এমন তথ্য ।তবু এ সংখ্যা যেন পর্যাপ্ত নয়। সুন্দরবনকেন্দ্রিক যে পরিমাণ মানুষ আসার কথা হিসাব অনুযায়ী আদৌ মিলছে না।অনিন্দ সুন্দর প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যের আধার আমাদের গর্বের প্রতিক প্রিয় সুন্দর বন।বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ, লোনাপানির বন সুন্দর বন।বনের এবিশেষ পরিচিতি ও চেনাতে এবং জানাতে দেশী বিদেশীদের কে, সময়ের আবর্তে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের চিন্তার আকাশে জন্ম নেয় এক মহতি উদ্যোগ ।যার ফল আজকের এই আকাশ নীলা ইকোট্যুরিজম। জন্ম লগ্ন থেকে যেন মানুষকে আকৃষ্ট করছে।মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া মিললেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, থাকার সুষম ব্যবস্থা না থাকায় দিনে দিনে যেন তার কর্ম পরিধি কমছে এই কাব্যিক লীলাভূমিতে জন্ম নেওয়া আকাশ লীনা ইকোট্যুরিজমের। সৃষ্টি লগ্নে তার সৃষ্টির উপর যে কর্মযজ্ঞ ছিল তা দিনে দিনে ঝিমিয়ে পড়ছে।যতটুকু অগ্রগতি, অগ্রসর হওয়ার কথা ছিল তার যেন কানা কড়িও আগাইনি।তার সৃষ্টি শৈলীর যে পরিকল্পনা ছিল আজ যেন তা মন্থর । আন্তরিকতার অভাব , ভবন অবকাঠামো সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজগুলো অগ্রগতিহীনতার কারণে সুন্দরবনের যে জৌলুস তা ঠিকঠাক মতো মানুষ উপভোগ করতে পারছে না। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির নৈসর্গিক দৃশ্য জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পর্যটক মনে প্রতিস্থাপনের জন্য তথ্য, উপাত্ত সুবিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন।ঝড়—ঝঞ্ঝা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ জলোচ্ছাসের হাত থেকে রক্ষা করা মায়ের মত পরম মমতায় সুন্দরবন উপকূলবর্তী অঞ্চলকে আগলে রাখা আমাদের এ প্রিয় সুন্দর বন সম্পর্কে সবাই চিনবে জানবে এমন প্রত্যাশা সুধী মহলের। শুধু চিনবে বা জানবে কেন?সুন্দর বনের বিশাল জায়গা জুড়ে সুবিস্তৃত ছোট বড় কয়েক প্রজাতির সবুজ গাছের অপরুপ মনোরম দৃশ্য,বনের মধ্য বানর ও হরিণের লুকচুরি, বানর ও বাঘের চোখ রাঙানি দৃশ্য, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলরব,বনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নদীর কুল কুল ধ্বনি,নদীতে পাল তোলা নৌকার মনোহরী দৃশ্য,পূর্ণিমার রাতে জোছনার স্নিগ্ধতায় ফুরফুরে বিশুদ্ধ বাতাসে শুধু দেহ মন জুড়ায় না, অন্তর আত্মার ক্ষুধা — তৃষ্নার খোরাকও যোগায়।আগের মত এখন আর জেলে, বাওয়ালিদের ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গানের মধুর সুরে ভেসে আসে না। আসলেও সেটা তৎসামান্য।জীবন জীবিকার জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাট, মাছ, মধু আহরণ করে। তাদের জীবনের গল্প যেন সিনেমার গল্প কেও হার মানায়।লোম শিউরে ওঠা তাদেরে বাস্তবমুখী জীবনের গল্প কতইনা লোমহর্ষক। জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালিদের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানা যায় শিকারি বাঘের সাথে মানুষের ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, বাঘের মুখ থেকে শিকার মানুষকে ছাড়িয়ে নেওয়ার অসম সাহসিকতা।কখনো বা অন্ধ গলিত লাশ উদ্ধার কখনো বা অর্ধ লাশ খেয়ে ফেলা বিক্রিত আকৃতির মানবদেহ শিকারি বাঘের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়া এযেন একেকটা লোমহর্ষক জীবন্ত গল্প। তবে সচারচর দর্শনার্থীরা বাঘ দেখতে পায় না। গহীন জঙ্গলে এদের বসবাস। অনেক সময় ক্ষুধার্ত বাঘ খাবারের সন্ধানে বনের এদিক সেদিকে ঘুরে বেড়াতে থাকলে দেখা মেলে । সত্যিকার অর্থে জীবন্ত বাঘের দেখা না মিললেও এ বনের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বানর,হরিণ,জীব জন্তুর,ও কৃত্রিম কারুকায্য শোভিত গঠনশৈলী সহ গ্রামের সাধারন দৃশ্যের সমন্বয়ে সময়ের আবর্তে সৌন্দর্য্যের এই মিলন মেলা পরিপূর্ণ বিকশিত হয়ে মানব মনে প্রতিফলিত হবে এমন টা মনে করে স্থানীয় জনগন।বর্তমানে নির্মানাধীন এ পার্কের গেস্ট হাউস,পার্কিং স্পট,ওয়াচ টাওয়ার সহ বিভিন্ন কাজ অসমাপ্ত ।ওয়াচ টাওয়ারে বসে বনের বিচরনকৃত বন্য প্রানী দেখা যাবে যা অত্যন্ত মজার ব্যাপার বলে অনেকে মনে করেন।ইতোমধ্যে এ পার্কে মোঃ আবদুস সামাদ ফিস মিউজিয়ামে সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির নদী ও সামুদ্রিক মাছ।এ ছাড়া গাছে গাছে ঝুলছে কৃত্রিম বানর,ঘাস আর গাছের নিচে বাঘ, পাখি ও দলে দলে চিত্রালী মায়াবী হরিন।এত সুন্দর নান্দনিক সৌন্দর্য নিয়ে যায় কল্পনার গহীন রাজ্যে। আমাদের গর্বের প্রতিক আকাশনীলা ইকোট্যুরিজমে বিটিভির সবচেয়ে জনপ্রিয় শিক্ষা ও তথ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির একটি পর্ব এ পার্কে হওয়ায় এক অন্যরকম মাত্রা সৃষ্টি হয়েছিল ।এর পর থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় আনুপাতিক হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গর্বের প্রতীক প্রিয় সুন্দর বন পরিচিতিতে আরও একধাপ এগিয়ে গেল আকাশ নীলা। বেড়েছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা। তবুও যেন আশানুরূপ চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমাদৃত সৌন্দর্যের এই ভূস্বর্গে দর্শনার্থীদের পদচরণায় মুখরিত হবে । আনন্দ উচ্ছ্বাসের উদ্বেলিত হবে প্রতিটি দিনের প্রতিটি ক্ষণ । এই কাক্সিক্ষত ফল মিললেই সড়কপথে সুন্দরবন ভ্রমণে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে চির জাগ্রত সুন্দরবনের যে আসল রূপ বৈচিত্র তা মানব মনে প্রস্ফুটিত হবে। এমন প্রত্যাশা—আশা, আকাক্সক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ স্থানীয় সুধী মহলের। অপরূপ সৌন্দর্যের এই নৈসর্গিক ভূস্বর্গ পরিপূর্ণ ভাবে পর্যটন ক্ষেত্রে হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সু চিন্তিত বাস্তবমুখী উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত করা খুবই প্রয়োজন। আর এটা সম্ভব হলেই এই পর্যটন কেন্দ্র থেকে একটা বিরাট অংকের রাজস্ব আয় করা সম্ভব।