ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি \ সীমান্তবর্তী শ্যামনগর, কালিগঞ্জ উপকূলীয় উপজেলার মানুষগুলো অতীত থেকেই জীবন জীবিকার জন্যই প্রকৃতি আর নিয়তির সাথে যেন যুদ্ধ করে আসছে।সময় বদলেছে, আধুনিক সভ্যতার বিস্তার ঘটেছে।কিন্তু উপকূলীয় উপজেলার অধিকাংশ মানুষগুলোর ভাগ্য বদলায়নি। বন আর বাঁদা কেটে এক শ্রেণি জনগোষ্ঠীর বসতি শুরু হয় অতীতে।অতীতের সেই ক্লান্তিময় জীবন এখনো যেন তাদের আগলে রেখেছে।গৃহ ছিলনা, খাদ্য ছিল না, ওষুধ ছিল না, চলাচলের মাধ্যম ছিল না, ছিলনা ভালো যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা ।ছিল জমিদারি প্রথা। প্রান্তিক ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা কৃষকগুলো ছিল তাদের আযে়র অন্যতম উৎস।কৃষিজমি বর্গা ও কৃষকদের দেওয়া কর থেকেই তাদের আযে়শী জীবন যাপন চলতো। সমযে়র ব্যবধানে রীতিনীতি ও রেওয়াজের পরিবর্তন হযে়ছে।কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাঁধে এখনও রযে় গেছে কষ্টের জোয়াল ।জমিদার প্রথা বিলুপ্তি, দেশীয় ভূমি আইনের বিস্তৃতিতে প্রান্তিক দরিদ্র কৃষকেরা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস পায়। কিন্তু সমযে়র ব্যবধানে সেটিও যেন পরাধীনতার শিকলে বাঁধা পডে়। উপকূলীয় উপজেলায় কৃষি কাজের পরিবর্তে শুরু হয় লবণ পানির মৎস ঘের। সমযে়র সাদা সোনা নামে খ্যাত বাগদা চিংডি় উৎপাদনকারী এ ঘের গুলো বাহ্যিকভাবে অর্থ উপার্জন ব্যবসাযি়ক জোন হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায়। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে প্রান্তিক কৃষকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হয়। যাদের দুই এক বিঘা জমি ছিল তারা বড় বড় ঘের মালিকদের কাছে জমি বর্গ (হারি) দিতে বাধ্য হয়। অনেকেই তো জোর করে নিযে় নেয় হারি।এভাবেই প্রান্তিক কৃষকদের অতীতের মত কষ্টের জোয়াল কাঁধে পড়তে শুরু করে। বন্ধ হয় কৃষিকাজ। চারিদিকে ছেযে় যায় লবণ পানির মৎস্য ঘের। দিনে দিনে বাড়তে থাকে সুপেয় মিষ্টি পানির সংকট।বর্তমানে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।দৈনন্দিন জীবনের প্রযে়াজনীয় কাজ ও মিষ্টি পানিতে গোসল এযেন অনেকের কাছে স্বপ্নের মত হযে় দাঁডি়যে়ছে। মিষ্টি পানির জন্যই তাদের হৃদযে় যেন রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রীতিমতো অনেকেই দৌড়ঝাপ শুরু করেছে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে।যখনই কোন দপ্তর থেকে শোনা যায় লবণ পানির ঘের বন্ধ হবে তখন উপকূলীয় মানুষের কাছে এ যেন অমৃত বাণীর মত মনে হয়।কিন্তু কে শুনে কার কথা? গতানুগতিক নিয়মেই যেন সমযে়র ব্যবধানে সবকিছু থমকে দাঁড়ায়।আবার শুরু হয় বছর শুরুতে লবণ পানির ঘের। মিষ্টি পানির জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর করুন রোদন কবে শেষ হবে এমন প্রশ্ন জনমনে। গ্রীস্মের দিনে এক কলস সুপেয় মিষ্টি পানির জন্যই তো হাহাকার পড়ে।এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হয় এক কলস পানির জন্য।গা গোসল তো দূরে থাক। সুপেয় মিষ্টি পানির জন্যই উপকূলবাসীর এ বর্ণনাতীত কষ্ট, করুন রোদন পৌছাবে কি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলে । সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলার এক পাশ দিযে় বহমান সীমান্ত নদী।নদীর পানির তীব্র লবণাক্ততা, আর এ পানি দিযে়ই মৎস্যঘের দীর্ঘ পরিক্রমায় কৃষি জমিগুলো লবণাক্ত পানির মাধ্যমে ঘেরের সাথে সংযুক্ত থাকায় মাটির স্তর গুলোও লবণাক্ত হযে় গেছে । আর অতীতে নদীর একটা অংশ ভরাট ও বন, বাধা কেটে বসতি স্থাপন করা এ জমিগুলো লবণাক্তই ছিল আগে থেকেই । ফলের নিচের ভূগর্ভস্থ পানিগুলো অনেকাংশেই লবণাক্ত।নিচের ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত, উপরের চারপাশে পানি লবণাক্ত। প্রান্তিক কৃষকদের যার দুই এক বিঘা জমি আছে সেখানে পুকুর খনন করে মিষ্টি পানি পাবে সেটাও সম্ভব নয়।কারণ রাঘব বোয়ালদের ঘেরের মধ্যেই তো তার সে জমি। উপকূল বাসীর চতুর্মুখী এ মিষ্টি পানির সংকট অবসানের উপায় একমাত্র লবণ পানির ঘেরগুলো বন্ধ করা ।লবণ পানির ঘের বন্ধ হলে উপকূলীয় উপজেলা আবার সোনালী অতীত ফিরে পাবে। গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, নবান্নে ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠবে প্রতিটি কৃষকের বাডি় । এখন তো যাতায়াতের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ফলে কৃষক বাঁচবে, তার কৃষি কাজের মাধ্যমে উৎপন্ন পন্নের মধ্য দিযে়।সবুজ শস্য শ্যামলে ভরে উঠবে উপকূলীয় এ গ্রাম বাংলার প্রকৃতি। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ গুলো পাবে কাজের সুষম উৎস। এ পথ যোগাবে বেঁচে থাকার নতুন প্রেরণা।মুছে যাবে গা গোসল, ও সুপেয় মিষ্টি পানির অভাব।