এফএনএস এক্সক্লুসিভ: দেশের টেলিকম খাতে সেবার মান কমলেও গ্রাহকের ব্যয় বাড়ছে। আর গ্রাহক সেবার মান কমায় মোবাইল ও ইন্টারনে গ্রাহক সংখ্যাও কমছে। প্রতিদিন গ্রাহকদের পক্ষ থেকে হাজার হাজার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিটিআরসি ২৯টি ক্যাটাগরিতে ৩ হাজারের বেশি লাইসেন্স দিয়েছে। বলা হয়েছিল তাতে গ্রাহকসেবার মান বাড়বে। কিন্তু সব মিলিয়ে ওই খাতে হযবরল অবস্থা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং টেলিকম খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সূত্র মতে, সাত মাসের ব্যবধানে মোবাইল সেবার ওপর পর পর দুবার ভ্যাট আরোপ করায় গ্রাহকদের খরচ বেড়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বাড়তি ভ্যাট কমানোর আশ^াস দেয়া হয়েছে। তবে এখনো ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে টেলিকম খাত সংশ্লিষ্টরা এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) ঘেরাওয়ের হুমকিও দিয়েছে। তাছাড়া কলড্রপ বাড়তি ভোগান্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে। মোবাইলে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই কল কেটে যাওয়ায় গ্রাহকদের আবার নতুন করে সংযোগ নিতে হচ্ছে। তাতে অপারেটররা টাকা কাটলেও গ্রাহক ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না। সূত্র জানায়, টেলিকম খাতে নতুন কর আরোপে আরো বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে ৫ শতাংশ কর বাড়ানো হয়েছিল। এখন আবারো ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে মাত্র সাত মাসের মাথায় গ্রাহকদের ওপর ৯ দশমিক ২ ভাগ পরোক্ষ করের বোঝা বাড়লো। এখন থেকে গ্রাহকরা প্রতি ১০০ টাকার সেবা গ্রহণ করলে প্রদান করতে হবে ১৪২ দশমিক ৪৫ টাকা (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জসহ)। গত বাজেটের আগে যা ছিল ১৩৩ দশমিক ২৫ টাকা। অথচ টেলিকম সেবা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি। মোবাইল ফোনের সেবার ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাড়ছে গ্রাহকের খরচ। ইতোমধ্যে গ্রাহক ও টেলিকম খাতের জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতি টেলিকম খাতের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত এবং সরকারের রাজস্ব আয় হ্রাস করবে। অথচ গ্রাহকের স্বার্থে ডেটা প্যাকেজ সেবায় অপারেটরদের বাণিজ্যিক স্বাধীনতা প্রদান করা হলে দেশের টেলিযোগাযোগ খাত আরো গ্রাহককেন্দ্রিক, উদ্ভাবনী এবং প্রতিযোগিতামূলক হবে। তাছাড়া রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কোনো ডেটা প্যাক সুবিধা না থাকায় ফ্রিল্যান্সারসহ বিভিন্ন খাতে যারা রাতে ইন্টারনেট ডোঁনির্ভর কাজ করে তারা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে না। সময় নির্ধারণ না করে শুধু নেটওয়ার্কনির্ভর ডেটা সরবরাহ করার সুযোগ থাকলে অপারেটররা আরো সুলভমূল্যে ডেটা দিতে পারতো। এদিকে এ ব্যাপরে বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর জানান, কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই ইন্টারনেট সেবায় কর আরোপ করা এক ধরনের স্বৈরাচারী আচরণ। নতুন করে কর বৃদ্ধিতে হুমকির মুখে পড়বে টেলিযোগাযোগ ইন্টারনেট সেবা খাত। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি তো দূরে থাক, গ্রাহকরা ওই সেবা গ্রহণ করতে পারবে না। ফলে নতুন করে কর আদায় করার যে সিদ্ধান্ত তা হোঁচট খাবে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ জানান, সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় আমরা বিস্মিত। এমন পরিস্থিতিতে এটি বাড়ানো হলো যখন ধকল কাটিয়ে উঠছে অর্থনীতি, দেশে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে, দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ডিজিটাল অন্তভুর্ক্তির জন্য সংকল্পবদ্ধ টেলিযোগাযোগ শিল্প। কিন্তু এমন পদক্ষেপ এ অগ্রগতি ব্যাহত করবে এবং ডিজিটাল বৈষম্য বাড়াবে।