বিশেষ প্রতিনিধি \ সকল মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনা করে শেষ হয়েছে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফে পীর—এ কামেল বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মোজাদ্দেদ, অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংস্কারক, প্রখ্যত সাহিত্যিক, সমাজ সেবক, আত্মাধিক সাধক, সমাজ সংস্কারক, জ্ঞান তাপস, মুসলিম রেনেঁসার অগ্রদুত, মুক্তবুদ্ধি ও অসা¤প্রদায়িক চিন্তা—চেতনার অধিকারী, মনোচিকিৎসক, ঐতিহাসিক, দার্শনিক, ‘‘স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবা” ব্রত নিয়ে চলা নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা সুলতানুল আউলিয়া কুতুবুল আকতাব গওছে জামান আরেফ বিল্লাহ হজরত শাহ্ ছুফী আলহাজ্জ খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রঃ) এঁর ৬১ তম বার্ষিকী ৩ দিন ব্যাপী পবিত্র ওরছ শরীফ। নলতা পাক রওজা শরীফ প্রাঙ্গণে গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার বাদ ফজর থেকে মিলাদ শরীফ ও আলোচানা শুরু হয়ে সকাল ৯ টায় আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ ড. কাজী আলী আজম’র সভাপতিত্বে নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি আশিকুর রহমান প্রায় ঘন্টা ব্যাপি আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাতে বিশে^র সকল মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনা, আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা—মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দু’হাত তুলে মহান আল্লাহু রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়। এ সময় আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনিতে আকাশ—বাতাস মুখখরিত করে মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহু রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখ লাখ মুসল্লি আকুতি জানান। এ সময় কারো দুই চোখ ছিল মুদিত, কারো দৃষ্টি ছিল সুদূরে প্রসারিত। আর থরথর কম্পমান দুই ঠোঁটে মৃদুস্বরে উচ্চারিত হয়েছে আমিন আমিন ধ্বনি। জীবনের সব পাপ—তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়—বিনয় করে পানাহভিক্ষা করছিলেন তারা। আখেরী মোনাজাতের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত করেন, মোঃ আব্দুল হাকিম। হামদ, নাতে—রাসুল ও মুরশিদী পরিবেশন করেন, মো. মানছুরুর রহমান, মো. ফিরোজ আলম, মো. মাসুম বিল্লাহ, মো. আবতাব হোসেন বাচ্চু। কেয়াম পরিবশেন করেন, হবিগঞ্জের আব্দুর রহমান। ভক্তের পত্র থেকে পাঠ করেন, মিশনের সহসভাপতি আলহাজ্জ মোঃ সাইদুর রহমান। আলোচনা করেন, খানবাহাদুর আহ্্ছানউল্লা ইনস্টিটিউট’র মহাপরিচালক আলহাজ্জ এ এফ এম এনামুল হক, আবু তৈয়ব মোঃ মাহবুবে খোদা প্রমূখ। আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে নলতা শরীফ এলাকা ধর্মীয় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। লাখ লাখ মুসল্লির আমিন, আল্লাহুমা আমিন ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে নলতা শরীফ। মোনাজাতে নলতা শরীফে লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে। ফজরের নামাজের পরই নলতা শরীফসহ আশপাশ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সমাজিক যোগযোগ ফেসবুকে নলতা শরীফের এ বিশেষ মোনাজাত সরাসরি স¤প্রচার করায় বাসাবাড়ি, দোকান, অফিস, আদালত যে যেখান থেকে পেরেছেন দেশ—বিদেশের মুসলমানরা মোনাজাতে শরিক হন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা শুরু করে। আগে যাওয়ার জন্য মুসল্লিরা তাড়াহুড়ো করতে শুরু করে। এতে সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ সড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। নলতা পাক রওজা শরীফের খাদেম আলহাজ্জ মৌঃ আব্দুর রাজ্জাকসহ নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন ও দেশ—বিদেশ থেকে আগত আহ্ছানিয়া শাখা মিশনের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, ব্যবসায়ীবৃন্দ, জেলা, উপজেলা, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবুন্দসহ বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার পীর কেবলার ভক্তবৃন্দ আখেরী মোনাজাতে অংশত্রহণ করেন। উক্ত ৩দিন ব্যাপী ওরছ শরীফে আগতদের মধ্যে দেখেছি আনন্দ, উৎসাহ, উদ্দীপনা। দেখেছি ওরছ শরীফের সুস্বাদু তাবারক খাবার পর তাদের চোখে মুখে পরিতৃপ্তির ছাপ। কোন একজন মানুষও যেন তাবারক না খেয়ে যায়, সবাই যেন এক লোকমা তাবারক খেয়ে যেতে পারে, কোনরকম যেন তাদের অসুবিধা না হয় সে ব্যাপারে সেই ব্যবস্থা করে মিশন কতৃর্পক্ষ। আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকতে কোথাও একটু টান বা গরমিল দেখা যায় নাই। ৩দিন এভাবেই খানাপিনা চলেছে বিরামহীন। এই মহা নিয়ামত ও বরকতপূর্ণ তাবারক খেয়ে যে, কত মানুষের জটিল ও কঠিন অসুখ—বিসুখ, রোগ—শোক, জরা—ব্যাধি বালা—মসিবত, বদজীন—ভূতের তাছির থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়ও অনেকে এই তাবারুক খেয়েছেন বলেও জানা গেছে। ৩দিন ব্যাপী এই পবিত্র ওরছ শরীফ মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সুন্দর ও সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান, মিশনের হিসাব রক্ষক মোঃ এবাদুল হক।