মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন

শেখ হাসিনা আইয়ামে জাহেলিয়াতের নমুনা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন: ড. ইউনূস

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস: রাজধানীর তিনটি স্পটে বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগের একটা নমুনা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর কচুক্ষেত, উত্তরা, আগারগাঁও এলাকায় বিগত সরকারের তিনটি গোপন কারাগার পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টা। বিগত বছরগুলোতে শেখ হাসিনার সরকার ভিন্নমতের মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে এসব গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখে এবং নির্যাতন করে। গোপন এসব কারাগার ভুক্তভোগীসহ দেশবাসীর কাছে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত। আয়নাঘরে খাঁচার মতো জায়গায় যেখানে বন্দিদের আটকে রাখা হতো সেসব জায়গা ঘুরে দেখেন প্রধান উপদেষ্টা। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগের একটা নমুনা প্রতিষ্ঠা করে গেছে। অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, আমাকে নতুন করে বলতে হবে না। বর্ণনা দিতে গেলে বলতে হয়Íআয়নাঘরের ভেতরে খুবই বীভৎস দৃশ্য। এখানে মনুষ্যত্ববোধের কিছু নেই, যা হয়েছে তা নৃশংস। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা কি আমাদেরই সমাজ? এটার কোনো ব্যাখ্যা নাই। যতটাই শুনি, অবিশ্বাস্য মনে হয়। যারা নিগৃহীত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে তারাও আমাদের সঙ্গে এসেছে, তাদের মুখেই শুনলাম। বিনা দোষে কতগুলো সাক্ষী নিয়ে, হাতে এক্সপ্লোসিভ ধরিয়ে দিয়ে কাউকে সন্ত্রাসী—জঙ্গি বলে রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের বিনা কারণে, বিনা দোষে উঠিয়ে আনা হতো। সন্ত্রাসী, জঙ্গি বলে এখানে ঢুকিয়ে রাখা হতো। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই রকম টর্চার সেল (নির্যাতনকেন্দ্র) সারা দেশজুড়ে আছে। ধারণা ছিল এখানে কয়েকটা আছে। এখন শুনছি বিভিন্ন ভার্সনে (সংস্করণে) সারা দেশজুড়ে আছে। সংখ্যাও নিরূপণ করা যায়নি। মানুষকে সামান্যতম মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন বলছিলেন খুপরির মধ্যে রাখা হয়েছে। এর থেকে তো মুরগির খাঁচাও বড় হয়। বছরের পর বছর এভাবে রাখা হয়েছে। গুম—খুনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সমাজ টিকবে না উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা নতুন সমাজ গড়া, অপরাধীদের বিচার করা, প্রমাণ রক্ষার ওপর জোর দেন। এ সময় তিনি গুম সম্পর্কিত তদন্ত কমিশনকে ধন্যবাদ দেন সঠিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করার জন্য। তিনি জানান, মানুষের সামান্যতম অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। জাতির জন্য যা চূড়ান্ত রকমের ডকুমেন্ট হবে। সাড়ে ১৭০০ প্লাস এমন ভূক্তভোগি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অজানা কতজন রয়েছে তার ঠিক নেই। কিছু মানুষ উধাও হয়ে গেছে। গুমের শিকার বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ক্ষতিপূরণের হিসাব আমরা দেখিনি। আমার দেখছি তার ন্যায়বিচারটা যাতে হয়। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা থেকে সে যেন মুক্তি পায়। তারপর দেখা যাবে কী করা যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনের সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com