বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

পার্লামেন্টে মিথ্যা বলায় বিরোধীদলীয় নেতাকে জরিমানা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস বিদেশ : সিঙ্গাপুরের বিরোধীদলীয় নেতা প্রীতম সিংকে সোমবার পার্লামেন্টে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে। তবে তিনি সামনের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অল্পের জন্য হারাননি। ওয়ার্কার্স পার্টির (ডব্লিউপি) মহাসচিব প্রীতম (৪৮) সংসদীয় এক কমিটির কাছে মিথ্যা বলার দুটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ওই কমিটি তার দলের এক সংসদ সদস্যকে কেন্দ্র করে তদন্ত চালাচ্ছিল। এই রায় এমন এক সময়ে এলো, যখন দক্ষিণ—পূর্ব এশিয়ার এ দেশটির দুর্বল বিরোধী দল শাসক পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) বিরুদ্ধে অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে চাচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যেই দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯৫৯ সাল থেকে সিঙ্গাপুর শাসন করে আসছে পিএপি। জেলা আদালতের বিচারক লুক ট্যান বলেছেন, সংসদীয় কমিটির সামনে প্রীতম যে দাবি করেছিলেন, বাস্তবে তিনি সেই অনুসারে পদক্ষেপ নেননি। তিনি নতুন সংসদ সদস্য রাইসা খানকে তার মিথ্যা স্বীকার করতে যথেষ্ট চাপ দেননি। বিচারক আরো বলেন, রাইসা খান তার সাক্ষ্যে যে দাবি করেছিলেন, তা গ্রহণযোগ্য। তিনি আদালতে বলেছিলেন, এক বৈঠকে প্রীতম তাকে বলেছিলেন, ‘মিথ্যাকে কবরে নিয়ে যাও।’ দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর প্রীতম সিংকে প্রতিটি অভিযোগের জন্য সাত হাজার সিঙ্গাপুর ডলার করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে তিনি আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন। আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটা সহজ নির্বাচন হবে না…আমাদের কঠোর লড়াই করতে হবে, আর সেটাই আমরা করব। বিরোধী দলে রাজনীতি করা দুর্বলচিত্তের মানুষের কাজ নয়।’ সিঙ্গাপুরের সংবিধান অনুযায়ী, কেউ যদি এক বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড পান অথবা ১০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার বা তার বেশি জরিমানা করা হয়, তাহলে তিনি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা সংসদ সদস্য পদে থাকার অযোগ্য হয়ে পড়েন। তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইউজিন ট্যান জানান, প্রীতম অযোগ্য হচ্ছেন না, কারণ ১০ হাজারের ডলারের জরিমানার সীমা অতিক্রম হয়নি। জরিমানার পরিমাণ যোগ করে গণনা করা যায় না। পরে নির্বাচন বিভাগও ফেসবুকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পার্লামেন্টে মিথ্যা তথ্য
এই কেলেঙ্কারির জেরে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছিলেন রাইসা খান। তিনি স্বীকার করেছেন, ধর্ষণের শিকার এক নারীর ঘটনা পার্লামেন্টে তিনি বানিয়ে বলেছিলেন। ২০২১ সালে পার্লামেন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেছিলেন, এক পুলিশ কর্মকর্তা ওই ধর্ষিতার পোশাক ও মদ্যপানের বিষয়ে ‘সংবেদনশীলতাহীন’ মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে শানমুগম পরে জানান, পুলিশের রেকর্ডে এমন কোনো ঘটনার অস্তিত্ব নেই। এরপর রাইসা স্বীকার করেন, তিনি মিথ্যা বলেছেন। এ ঘটনার তদন্ত করতে গঠিত সংসদীয় কমিটির সামনে প্রীতম সিং মিথ্যা বলেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। আদালতের নথি অনুযায়ী, তিনি ওই কমিটিকে বলেছিলেন, তিনি জানতেন না যে রাইসা ধর্ষণের শিকার নারীর প্রসঙ্গে বানানো গল্প বলেছেন। এতে বোঝা যায়, তিনি দলীয় নেতা হিসেবে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিচারক বলেন, তার বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।
২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৯৩টি আসনের মধ্যে পিএপি ৮৩টি আসনে জয়লাভ করে ক্ষমতা ধরে রাখে। প্রধান বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি ১০টি আসনে জয়ী হয়, যা তাদের স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে ভালো ফল। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা বলেছেন, তারা আসন্ন নির্বাচনে আসন আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। এই নির্বাচন হবে নতুন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওংয়ের জন্য প্রথম বড় রাজনৈতিক পরীক্ষা।
সূত্র : এএফপি

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com