কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি \ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় বোরো ধানে ছত্রাকজনিত রোগ ব্লাস্টে’র সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে এসব বোরো ক্ষেত। মাঠের পর মাঠ বোরো ধানের ক্ষেত সাদা হয়ে গেছে। ধানের পরিবর্তে বাতাশে দোল খাচ্ছে চিটা ধান। মাঠের দিকে দূর থেকে তাকালে মনে হয় ধানগুলো পেকে আছে। কিন্তু ধান ক্ষেতের পাশে গেলে দেখা মিলছে ধানের ভেতর কোন চাল নেই। ধান চিটায় রূপ নিয়েছে। এতে সর্বশান্ত হতে চলেছে হাজারো বোরো চাষী। ক্ষতবিক্ষত কৃষকের স্বপ্নের ফসল ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ফসল ঘরে তোলার পূর্ব মুহূর্তে ধানের ব্লাষ্ট রোগ দেখা দেয়ায় কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের মুখে হাসির পরিবর্তে ঝরছে চোখের জল। কৃষক ফসলি জমিতে গিয়ে হতাশা আর কান্নায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ফসলের রোগ সমাধানের জন্য পাগলের মতো ছোটাছুটি করছেন কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ওষুধের দোকান গুলোতে। কৃষকরা আশা করেছিলেন এ বছর বাম্পার ফলনের কিন্তু শীষ গজানোর পর ধীরে ধীরে পাল্টে যায় চিত্র। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের কলারোয়া উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। যার মধ্যে ব্রি-২৮, ৫৮, ৬৭, ৮৪, ৮৮ ও ১০০ জাতের ধান বেশি লাগানো হয়েছে। এছাড়া কোথাও কোথাও হাইব্রিড জাতের বোরো ধানও লাগানো হয়েছে। ফসলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে এ বছরের জানুয়ারি মাসে ধানের চারা লাগানো শেষ হয়েছে। শনিবার উপজেলার দেয়াড়া, কাশিয়াডাঙ্গা, পাকুড়িয়া, ছলিমপুর, তরুলীয়া, যুগিখালী কয়েকটি গ্রামের বোরো ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, ধান গাছের পাতা মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। পাতায় চোখের মতো ডিম্বাকৃতির ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। এসব ক্ষতের মাঝে ধূসর ও চারদিকে লাল বা বাদামি রং ধারণ করেছে। দেয়াড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান, ওজিয়ার রহমান ও মতিয়ার রহমান জানান, তারা ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। কয়েকদিন আগে লক্ষ্য করেন, ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ শুরু হয়েছে। পরে ক্ষেতে কীটনাশক দেন। এখন কিছুটা সংক্রমণ কমেছে। তিনি আরো বলেন, আগে যে পাতাগুলো রোগাক্রান্ত হয়েছিল তা শুকিয়ে গেছে। ওষুধ দেওয়ার পরে নতুন করে আর সংক্রমণ দেখা যায়নি। এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আমি অনেক বছর যাবৎ ধরে বোরো ধান আবাদ করে আসছি। তবে এই বছর ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ একটু বেশি। তাই ওষুধও বেশি ছিটাতে হচ্ছে। তারপরেও ফল ভারো হবে কিনা জানিনা। তরুলিয়া গ্রামের কৃষক সরাফাত, আব্দুল কুদ্দুস, সবুজ শেখ বলেন, আমাদের জমির পাশের ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ শুরু হয়েছে। সেই ভয়ে আমরা ওষুধ ছিটানো শুরু করেছি। তবে বছর মাঠের পর মাঠ ব্লাস্ট রোগের দেখা দিয়েছে। কামারালী গ্রামের কৃষক সালাম বলেন, ব্লাস্ট রোগ হলে গাছের পাতা মরে যায়। এতে উৎপাদন কমে যায়। সংক্রমণ কমাতে অনেক টাকার ওষুধ ছিটাতে হয়। আমার ক্ষেতে আক্রমণ হয়েছে। ওষুধও দিয়েছি। দ্রুত যদি রোগ না সারে তাহলে ধানের উৎপাদন কমে যাবে, সেই দুশ্চিন্তায় আছি। আবুল বাসার নামের আরেক কৃষক বলেন, ধান উৎপাদনে স্বাভাবিক যে খরচ হয়, ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হলে ওষুধ ছিটাতে সেই খরচ তুলনামূলক বেড়ে যায়। আবার উৎপাদনও কম হয়। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই। এবার আমরা মনে করে ছিলেন ধানের বাম্পার ফলন হবে কিন্তু ব্লাস্ট রোগ আমাদের সেই আশা পুরুন করতে দিলো না। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বোরো ধানের ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ খুব একটা ক্ষতি করতে পারবে না। তারা কৃষকদের রোগ দমনে নানা রকমের কলাকৌশল শেখাচ্ছেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ (কীটনাশক) ছিটাতে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সম্প্রতি উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আমরাও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে কম্বাইন টিম গঠন করে প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদেরকে সচেতন এবং কীটনাষক ছিঁটানোর পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছি। তারা ওষুধ দিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে আনছেন। তিনি আরো বলেন, ব্যাপকভাবে বোরো ক্ষেতে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়নি। উপজেলায় প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আমি নিয়মিত সেসব ক্ষেত পরিদর্শন করছি। এই নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা না করতে পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার বেশি ফলন হবে।