এফএনএস: বিচার বিভাগ সংস্কার রোডশো একটি শক্তিশালী গতি অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। গতকাল শনিবার ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি), বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচারসেবা প্রদানে দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয় সম্পর্কে আয়োজিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বক্তব্যের শুরুতেই প্রধান বিচারপতি এই সেমিনারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এই সেমিনারের সময়সূচি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের সেমিনার সিরিজের পঞ্চম এবং রাজধানীর বাইরে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সেমিনার। এটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে বিশেষভাবে গুরুত্ব বহন করছে। প্রথমত, এটি আমাদের সেমিনার সিরিজের আওতায় উত্থাপিত সব ধারণা এবং প্রস্তাবিত মূলভিত্তিগুলোর পর্যালোচনার একটি দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয়ত, এই সেমিনারটি এমন একটি সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছেÍ যখন দেশ ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন খাতভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাবের ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের প্রচেষ্টা চলছে। এখানে আমাদের মনে রাখা উচিত যে, বিচার বিভাগ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে এর সংস্কার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে একটি অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে, যা সর্বোচ্চ আদালতের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তদুপরি, বিচার বিভাগের বিস্তৃত এবং বিশদ খাতভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগি করা হয়েছে এবং তাদের প্রস্তাবে সেগুলোর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তৃতীয়ত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)—এর সহযোগিতায় আয়োজিত সংস্কার রোডশো এখন একটি শক্তিশালী গতি অর্জন করেছে। এর ফলে, জেলা আদালত এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেসি নিজেদের সংস্কার কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, যা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর একটি উদাহরণ হলো, ২০২৫ সালের ১০ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী জেলা আদালত, মেট্রোপলিটন সেশন আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালু হওয়া হেল্পলাইন, যা সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইন অনুসরণ করে চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, রাজশাহীর এই উদ্যোগটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে কয়েক মাস আগে আমার প্রবর্তিত ১২ দফা নির্দেশনার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো জনগণ—কেন্দ্রিক বিচারসেবাপ্রদান ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সাধারণ জনগণের জন্য দ্রুত ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করা। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, এখন ময়মনসিংহ সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য হবে এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমাদের এখন সময় এসেছে, আমাদের সংস্কার প্রচেষ্টার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করার। তিনি জেলা বিচার বিভাগ এবং ম্যাজিস্ট্রেসিকে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংস্কারক এবং উদ্ভাবক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে এবং ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪—এ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ঘোষিত অভিভাষণে উপস্থাপিত সংস্কার কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলো জেলা বিচার বিভাগ এবং ম্যাজিস্ট্রেসির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এই সময় আমাদের যৌথ প্রচেষ্টা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন এবং ভবিষ্যৎ সংস্কারের পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এই সংস্কার রোডশোগুলোর মাধ্যমে আমরা সঠিক প্রক্রিয়া এবং চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার কার্যকর পথ খুঁজে পেয়েছি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার বার্তা খুবই স্পষ্ট, দায়িত্ব নিন। আমি আশা করি, এই বার্তা সারা দেশে শক্তিশালীভাবে প্রতিধ্বনিত হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার। উক্ত সেমিনারে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার দেশের বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ মর্মে মন্তব্য করেন এবং উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের বিভাগের জন্য ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।