এম. আবু ইদ্রিস \ তরমুজ পুষ্টি গুনের পাওয়ার হাউজ নামে খ্যাত। তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে যার পরিমান ৯২ শতাংশের ও উপর। গরমের সময় যখন ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়, তখন তরমুজ খেলে শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়। ফলে শরীর সুস্থ, সতেজ ও সবল থাকে। পুষ্টি গুনে ভরপুর এ তরমুজে ভিটামিন এ, সি, বি ও বি—২, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। বিভিন্ন গুনে গুনানিত সুস্বাদু এ ফল উৎপাদন, প্রচার প্রসার ও পরিচিতি দেশজুড়ে বিস্তৃত। কিন্তু প্রত্যন্ত শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত কৃষকরা এ ফল উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক চাকা গতিশীলতার মধ্য দিয়ে ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছে। গ্রীষ্ম মৌসুমী এ ফসল কিন্তু এখন বারোমাস চাষ হয়। মৌসুম শুরু হতে না হতে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে তাদের ক্ষেত প্রস্তুত বীজ বপন ও বীজ থেকে গজানো গাছের পরিচর্যায় একসময় ফুলে ফলে ভরপুর হয়ে ওঠে ফসলীমাঠ। পাকা ফসলের দিকে তাকিয়ে কৃষকের চোখে মুখে ভেসে ওঠে আনন্দে, তৃপ্তির হাসি। গতানুগতিক এ বছরও উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষকরা তাদের ক্ষেত প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে বপন করা বীজের অঙ্কুরিত চারা পরিচর্যা শুরু করেছে। কিন্তু দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে ওঠে স্পষ্ট দুশ্চিন্তার ছাপ। আলাপচারীতাই তাদের কাছ থেকে জানা গেল যাতায়াত ব্যবস্থা অনুন্নত থাকার কারণে তারা মৌসুমী এ ফল ভালো দামে বিক্রি করতে পারেনা। তার উপরে অতিরিক্ত তীব্র তাপ দহের কারণে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় পানির সংকট পড়ে। ক্ষেতে ঠিকঠাক পানি না দিতে পারার কারণে অনেক সময় ফসল ভালো হয় না। এছাড়া হঠাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতির শিকারহন এ অঞ্চলের কৃষকরা। কৃষকদের দাবি পানি নিষ্কাশনের জন্য এক সময় পর্যাপ্ত খাল ছিল। বর্ষা মৌসুম এসব খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হত। গ্রীষ্ম মৌসুমে এসব খাল ভর্তি পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এসব খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এই খালগুলো যদি সরকারি ভাবে খননের উদ্যোগ নেওয়া হয় তবে উপকৃত হবে কৃষি পরিবার। শুধু তরমুজ নয় পাশাপাশি অন্যান্য ফসল ও ফলানো সম্ভব। এ বিষয়ে কৈখালী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার অনুপম রায় এর সাথে ০১৭৮৫০৭৯০৯৪ নম্বর মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন কৈখালী ইউনিয়নে ৬৪ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে। প্রান্তিক কৃষকদের সুযোগ—সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে— তিনি বলেন সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় না শুধুমাত্র পরামর্শ ব্যতীত। তবে পানি স্বল্পতার জন্য পাঁচ শতক আয়তনের প্রায় ৫০ (পঞ্চাশ)টি পুকুর সরকারিভাবে খনন করে দেওয়া হয়েছে। নিচের ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হওয়ায় কৃষিকাজের অনুপযোগী এজন্য এ পুকুর থেকে ধান চাষ ব্যতীত অন্যান্য ফসলে কৃষকরা পানি ব্যবহার করে থাকেন। উপকূলীয় উপজেলায় প্রায় ১৫০ (একশত পঞ্চাশ) হেক্টর জমিতে কৃষকরা তরমুজ চাষ করছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন দৃষ্টিপাত এ প্রতিনিধিকে। উপজেলার কৈখালী, রমজান নগর, বুড়ি গোয়ালিনী ইউনিয়ন সহ অন্যান্য ইউনিয়নে দিন বদলের প্রচেষ্টায় কৃষকরা ঝুকছে তরমুজ চাষে। পর্যাপ্ত সরকারি সুযোগ—সুবিধা, প্রশিক্ষণ ও পানির অভাব পূরণ হলে তরমুজ চাষে অভাবনীয় সাফল্য পেতে পারে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। উৎপাদনে বিপুল সম্ভাবনার দার হতে পারে উপকূলীয় উপজেলা। আন্তঃদেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব এমনটা মনে করছেন শুধী মহল।