আজ ৪ মার্চ, এক উত্তাল ও ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী, সারা দেশে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। যদিও ঢাকায় সাময়িকভাবে কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়, তবে চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুরে তা বলবৎ থাকে। খুলনায় হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ৬ জন নিহত ও ২২ জন আহত হন। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর হামলায় ৩ ও ৪ মার্চ মিলে মোট ১২০ জন প্রাণ হারান এবং ৩৩৫ জন আহত হন। দেশব্যাপী আহতদের সুচিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এমন উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাসভবনে আওয়ামী লীগের মূলতবি সভায় ভবিষ্যৎ কর্মসূচির দিকনির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, “আজ শুধু আওয়ামী লীগ নয়, গোটা বাঙালি জাতিই এক অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন। আমাদের সামনে দুটি পথ খোলাÑএকটি হলো সমস্ত ত্যাগ স্বীকার করে অবিচলভাবে পূর্ণ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া, আর অন্যটি হলো ভুট্টো—ইয়াহিয়ার শর্ত মেনে নেওয়া।” তিনি আরও বলেন, “আমি সারা জীবন ক্ষমতার লোভ ত্যাগ করে দেশ ও জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি। বাংলার মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে আমাকে মুক্ত করেছে। ৬ দফার প্রতি তারা ম্যান্ডেট দিয়েছে। এখন শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের অপমানজনক শর্ত মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।” এদিন বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের মধ্যে সারাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কাঠামো গঠনের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া, শিল্পী সমাজ রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ রাখে এবং পাকিস্তান টেলিভিশনের নাম পরিবর্তন করে ‘ঢাকা টেলিভিশন’ নামকরণ করা হয়। এই সময় থেকে কার্যত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সমগ্র বাংলার আন্দোলন পরিচালিত হতে থাকে, যা জাতিকে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।