রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

অগ্নিঝরা মার্চ’ ৭১

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০২৫

এফএনএস: ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়। এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তা শুধু একটি ভাষণই নয়, ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এই ভাষণের মাধ্যমে তিনি নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র যোদ্ধায় পরিণত করেছিলেন। আজও এই দিনটি আমাদের জাতীয় চেতনায় অম্লান হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য। সেদিনের সেই জনসমুদ্র ছিল বাংলার মুক্তিকামী মানুষের এক অভূতপূর্ব প্রকাশ। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তিনি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও বাংলার মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি চারটি শর্ত দিয়েছিলেন: সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, সেনাবাহিনীর ব্যারাকে ফিরে যাওয়া এবং বাঙালি হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, “প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।” তাঁর এই বক্তৃতা শুনে বাংলার মানুষ সেদিনই সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল। এই ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দারুণভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার বইতে লিখেছেন, “গুরুত্বপূর্ণ ৭ মার্চ যতই ঘনিয়ে আসছিল, ঢাকা ততই গুজব ও আতঙ্কে উত্তাল হয়ে উঠছিল।” পাকিস্তানি কতৃর্পক্ষ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে চাইলেও বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, “আমরা যদি সাড়ে সাত কোটি মানুষের কণ্ঠ সম্প্রচার করতে না পারি, তাহলে আমরা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাব।” ৭ মার্চের ভাষণ শুধু বাংলার মানুষকেই উদ্বুদ্ধ করেনি, এটি বিশ^ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই ভাষণকে বিশেষজ্ঞরা আব্রাহাম লিংকনের ‘গেটিসবার্গ অ্যাড্রেস’—এর সঙ্গে তুলনা করেন। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ ছিল একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও আদর্শের ভিত্তিতে রচিত। তিনি বাংলার মানুষের হৃদয়ে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন। তাঁর ভাষণ শুনে বাংলার মানুষ সেদিনই বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের মুক্তির একমাত্র পথ হলো স্বাধীনতা অর্জন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com