এফএনএস: আজ ১০ মার্চÑবাংলার সংগ্রামী ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির আন্দোলন আরও তীব্র রূপ নেয়। জাতির মুক্তির আকাক্সক্ষা দিনে দিনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আর স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতির গতি আরও বেগবান হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন এক বিবৃতিতে স্পষ্ট ঘোষণা দেন, “বাংলাদেশে জনগণের ইচ্ছাই এখন চূড়ান্ত কথা। যারা শক্তির দাপটে আমাদের মতের ওপর তাদের মত চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, তারা আজ বিশ^ দরবারে নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে।” বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্য আন্দোলনরত জনতাকে আরও উজ্জীবিত করে তোলে। এদিনই তৎকালীন প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক ‘দৈনিক পাকিস্তান’ জনগণের চূড়ান্ত দাবি মেনে নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। পাশাপাশি, ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য পিপল’ পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সমালোচনা করে, তার ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানায়। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারা বাংলায় অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকে। তবে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম একেবারে অচল না হয়ে পড়েÑএটি নিশ্চিত করতে আন্দোলনের কৌশলগত দিক পরিবর্তন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহযোগী তাজউদ্দিন আহমেদ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালানোর ঘোষণা দেন, যাতে অর্থনীতির মূলধারা সচল থাকে এবং জনজীবনে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি না হয়। এই দিন নিউইয়র্কে প্রবাসী পূর্ব পাকিস্তানি ছাত্ররা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, বিশ^বাসীর কাছে বাংলাদেশের সঙ্কট তুলে ধরার প্রয়াস চালায়। বঙ্গবন্ধু বিদেশি সাংবাদিকদের আহ্বান জানান, তারা যেন বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি বিশে^র কাছে তুলে ধরে। ১০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেল থেকে ৪০ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। এই পালানোর সময় গোলাগুলিতে একজন কয়েদি নিহত হন, আহত হন দুইজন পুলিশ সদস্য ও ২৫ জন কয়েদি। অন্যদিকে, উত্তপ্ত রাজশাহী শহর থেকে কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়, যা প্রমাণ করে যে আন্দোলনের চাপে প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়ছে। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি দিন নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন অর্জন ও দৃঢ় সংকল্পের সাক্ষী হয়ে উঠেছিল। ১০ মার্চও ছিল সেই উত্তাল সময়ের একটি অনন্য অধ্যায়Ñযেখানে প্রত্যেকটি মুহূর্ত বাঙালিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল স্বাধীনতার চূড়ান্ত সোপানে।