ফতোয়া : সেহেরি সংক্রান্ত বিদআত— দেখা যায়, রমজান মাসে শেষ রাতে মুআযযিনগণ মাইকে উচ্চ আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত, গজল, ইসলামি সঙ্গীত ইত্যাদি গাওয়া শুরু করে। অথবা টেপ রেকর্ডার চালিয়ে বক্তাদের ওয়াজ, গজল বাজাতে থাকে। সেই সাথে চলতে থাকে ভাইয়েরা আমার, বোনেরা আমার, উঠুন, সেহেরির সময় হয়েছে, রান্না—বান্না করুন, খাওয়া—দাওয়া করুন” ইত্যাদি বলে অনবরত ডাকাডাকি। অথবা কোথাও কিছুক্ষণ পরপর উঁচু আওয়াজে হুইশেল বাজানো হয়। এর থেকে আরো আজব কিছু আচরণ দেখা যায়। যেমন, এলাকার কিছু যুবক রামাযানের শেষ রাতে মাইক নিয়ে এসে সম্মিলিত কন্ঠে গযল বা কাওয়ালী গেয়ে মানুষের বাড়ির দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে চাঁদা আদায় করে। অথবা মাইক বাজিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে। এ ছাড়াও এলাকা ভেদে বিভিন্ন বেদআতী কার্যক্রম দেখা যায়। আমাদের জানা উচিত, শেষ রাতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিচের আসমানে নেমে আসেন। এটা দুআ কবুলের সময়। আল্লাহ তাআলার নিকট এ সময় কেউ দুআ করলে তিনি তা কবুল করেন। মুমিন বান্দাগণ এ সময় তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন, কুরআন তেলাওয়াত করেন, মহান আল্লাহ তাআলা তাআলার দরবারে রোনাজারি করে থাকেন। সুতরাং এ সময় মাইক বাজিয়ে, গযল গেয়ে বা চাঁদা তুলে এ মূল্যবান সময়ে ইবাদতে বিঘ্নিত করা নিঃসন্দেহে গুনাহর কাজ। এতে মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানো হয়। যার ফলে অনেকের সেহেরি এমনকি ফজরের নামাজ পর্যন্ত ছুটে যায়। এই কারণে অনেক রোযাদারগণ সেহেরির শেষ সময় পর্যন্ত বিলম্ব না করে আগে ভাগে সেহেরি শেষ করে দেয়। এ সবগুলোই গুনাহের কাজ। তাহলে আমাদেরকে জানতে হবে ক্ষেত্রে সুন্নত কী?— এ ক্ষেত্রে সুন্নাত হচ্ছে, ফজরের আগে সেহেরির জন্য আলাদা একটি আজান দেওয়া। এই আজান হল সেহেরি খাওয়ার জন্য এবং তারপর ফজর সালাতের জন্য আরেকটি আজান দেওয়া। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে দুজন মুআযযিনও নিয়োগ করা ছিল। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, إِنَّ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ “বেলাল রাতে আজান দেয়। অত:এব তোমরা বেলালের আজান শুনলে পানাহার করতে থাক ইবনে উম্মে মাকতুমের আজান দেওয়া পর্যন্ত।” [বুখারী, অনুচ্ছেদ: ফজরের আগে আজান দেওয়া। মুসলিম: অনুচ্ছেদ: ফজর উদিত হলে রোযা শুরু হবে।] সুনানুন নাসাঈর হাদিসে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, إِنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ لِيُوقِظَ نَائِمَكُمْ وَلِيَرْجِعَ قَائِمَكُمْ وَلَيْسَ أَنْ يَقُولَ هَكَذَا يَعْنِي فِي الصُّبْحِ “বেলাল আজান দেয় এজন্য যে, যেন ঘুমন্ত লোক জাগ্রত হয় আর তাহাজ্জুদ আদায়কারী ফিরে আসে অর্থাৎ নামাজ বাদ দেয় এবং সেহেরি খায়।” সুতরাং এ দুটির বেশি কিছু করতে যাওয়া বিদআত ছাড়া অন্য কিছু নয়। এজন্যই ওলামাগণ বলেছেন, “যেখানে একটি সুন্নত উঠে যায় সেখানে একটি বিদআত স্থান করে নেয়।” আমাদের অবস্থাও হয়েছে তাই। সুন্নত উঠে গিয়ে সেখানে নিজেদের মনগড়া পদ্ধতি স্থান দখল করে নিয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় সুন্নতের দিকে ফিরে আসার তাওফীক দান করুন। আমীন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যে এলাকায় দুটি আজান দেওয়ার প্রচলন নেই সেখানে রমজান মাসে হঠাৎ করে দুটি আজান দেওয়া ঠিক নয়। কেননা, এতে মানুষের মাঝে সেহেরি খাওয়া ও ফজর সালাতের সময় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত