শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
ব্রাজিল দলে ফেরার আগেই ইনজুরিতে নেইমার, বিশ^কাপ বাছাইপর্বে অনিশ্চিত দেবহাটার পারুলিয়া সহ অন্যান্য হাটবাজারে ঈদ কেনা কাটায় ব্যাপক উপস্থিতি সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ সড়কের মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন এলাকা জনদুর্ভোগ আর জনদুর্যোগের স্থলে আবারও সেই ইট সোলিং \ কিন্তু কেন? নওয়াবেঁকীতে বাৎসরিক তাফসীরুল কোরআন মাহফিলের প্রস্তুতি সভা নূরনগরের জাকির হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নূরনগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরায় যমজ সন্তান পরিবারের ৩য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পলাশপোল স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী ফোরামের ইফতার মাহফিল উদারতা যুব ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল সুন্দরবনের গহীন থেকে এক বৃদ্ধা নারী উদ্ধার

জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের বেতন—ভাতা খাতে প্রতি বছরই বাড়ছে ব্যয়

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: জনপ্রশাসন কর্মচারীদের বেতন—ভাতা খাতে প্রতি বছরই বাড়ছে সরকারের ব্যয়। বিগত এক দশকে ওই ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের বেতন—ভাতাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে প্রতি বছরের বাজেটেই বরাদ্দ থাকে বড় অংকের অর্থ। ওই বাবদ সরকারের প্রকৃত ব্যয়ের পরিমাণও বেশ বড়। চলতি ২০২৪—২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই—ডিসেম্বর) এর আগের বছরের তুলনায় জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের বেতন—ভাতা খাতে সরকারের ব্যয় হাজার কোটি টাকারও বেশি বেড়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিসহ সামনে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতা দেয়া হলে এর প্রভাবে বেতন—ভাতা বাবদ সরকারের ব্যয় আরো বাড়বে। জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের বেতন—ভাতা বাবদ চলতি ২০২৪—২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকার ৩১ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ওই খাতে ৩০ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ওই খাতে ব্যয় ১ হাজার ৩৮ কোটি টাকা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন—ভাতা খাতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট ৮১ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, বিগত ১৯৭৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা—কর্মচারীদের জন্য মোট আটটি পে—স্কেল দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে সরকার ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা দিয়েছিল। তার আওতায় বেতন বেড়েছিলো সর্বোচ্চ ৬ হাজার আর সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩০০ টাকা। তবে ওই সময় বেতন স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড কর্তন করা হয়েছিলো। অবশ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রতি বছর বেতন—ভাতা খাতে বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ রাখা হলেও তার পুরোটা ব্যয় হয় না। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩—২৪ অর্থবছরের বাজেটে প্রথমে ওই খাতে ৮০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। পরে ওই বরাদ্দ কমিয়ে ৭৭ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। অবশ্য ওই অর্থবছরের অর্থের পুরোটা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। সূত্র আরো জানায়, গত এক দশকে জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের বেতন—ভাতা খাতে সরকারের ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৪—১৫ অর্থবছরে সরকার বেতন—ভাতা খাতে ২৭ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। তারপর ওই খাতে ২০১৫—১৬ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৯৪৯ কোটি, ২০১৬—১৭ অর্থবছরে ৪৯ হাজার ৩১ কোটি, ২০১৭—১৮ অর্থবছরে ৪৭ হাজার ৮৪৭ কোটি, ২০১৮—১৯ অর্থবছরে ৫৩ হাজার ৪০০ কোটি, ২০১৯—২০ অর্থবছরে ৫৬ হাজার ৯০৪ কোটি, ২০২০—২১ অর্থবছরে ৫৮ হাজার ৮৯১ কোটি, ২০২১—২২ অর্থবছরে ৬৩ হাজার ৩১৯ কোটি, ২০২২—২৩ অর্থবছরে ৬৩ হাজার ৮৫০ কোটি এবং সর্বশেষ ২০২৩—২৪ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা সরকারের ব্যয় হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই—ডিসেম্বর সময়ে সাধারণ সরকারি সেবা খাতে ৩৮ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা সরকার ব্যয় করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ওই খাতে ২৫ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে ব্যয় বেড়েছে ১৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থ বিভাগ সবচেয়ে বেশি ৩৬ হাজার ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় করেছিল ২১ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে অর্থ বিভাগের ব্যয় বেড়েছে ১৪ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। তাছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই—ডিসেম্বর সময়ে সাধারণ সরকারি সেবা খাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ওই সময়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬০২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। বর্তমানে দেশে মোট সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৮। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মকর্তা—কর্মচারীর সংখ্যা ১৫ হাজার ১৬৭। তাছাড়া অধিদপ্তর ও দপ্তরে ১১ লাখ ৫০ হাজার ৪২৩ জন এবং বিভিন্ন করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় কর্মরত আছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯২৮ জন। এদিকে দেশে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুরো জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। সরকারি কর্মকর্তারা নানা সুযোগ—সুবিধা ও পদোন্নতির দাবিতে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ওপর নজিরবিহীনভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। সরকারি কর্মকর্তা—কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবি অপরিবর্তিত থাকে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতা দেয়ার আলোচনা শুরু হলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাছাড়া অন্তর্বতীর্ সরকার একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। বর্তমানে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ১৭ জন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত আছেন। তাছাড়া প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একসঙ্গে ৭৬৪ জনের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ওসব কর্মকর্তার বেতন—ভাতাসহ পেনশনের পাওনা টাকা পরিশোধে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে সরকারের ব্যয় আরো বাড়বে। অন্যদিকে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্টদের মতে, সমপ্রতি যাদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তাদেরসহ বেতন—ভাতা খাতে ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। তার মধ্যে নতুন নিয়োগ হয়েছে, আবার অনেকেই অবসরে গেছেন। নানা হিসাব করে বাজেট করা হয়। তবে ব্যয় ধরার সময় কিছুটা বেশি ধরা হয়। তাতে হয়তো পুরোটা সবসময় খরচ হয় না। এর মধ্যে অনেকে অবসরে চলে গেছেন। অনেকের পদোন্নতি বা ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি হয়েছে। ওসব মিলিয়ে খরচ ধরা হতে পারে। সাধারণত জনপ্রশাসন যে অর্থে ব্যবহৃত হয়, বাজেটে ওই অর্থে ব্যবহার হয় না। রাষ্ট্রপতির অফিস, প্রধানমন্ত্রীর অফিস, মন্ত্রপরিষদ বিভাগ, সংসদ সচিবালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ— সবই জনপ্রশাসন খাত ধরা হয়। যেকোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বেতন—ভাতা প্রতি বছর অল্প অল্প করে বাড়ে। তবে বড় ধরনের প্রকল্প নিলে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ব্যয় বাড়ে। আবার প্রকল্প না নিলে অথবা কম নিলে খরচ অনেক কমে যাবে। কাজেই শুধু জনপ্রশাসন খাতই নয়, যেকোনো খাতেই গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব ব্যয়ে খুব তারতম্য হওয়ার কথা নয়। এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব—উল—আলম জানান, জনপ্রশাসনে দুই ধরনের ব্যয় রয়েছে। একটি হলো মাঠ প্রশাসন। উপজেলা থেকে শুরু করে অর্থাৎ ইউএনও অফিস, ডিসি অফিস, বিভাগীয় কমিশনারের অফিসগুলোয় সরকার বাজেট দিয়ে থাকে। এছাড়া জনপ্রশাসনের আটটি বিভাগ রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে, নিয়োগও হয়েছে। তাছাড়া প্রকল্পের খরচ কিছুটা বেড়েছে। গতবছর প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ছিল, এ বছর নতুন করে গতি বেড়েছে। তাছাড়া কেনাকাটাও আগের চেয়ে ভালো। তবে সঠিকভাবে ব্যয়টা হচ্ছে কিনা সেটা কঠোরভাবে মনিটরিং করা হয়। যে বাজেট থাকে সে অনুযায়ী ব্যয় সঠিকভাবে হলে সেটি জনপ্রশাসনের দক্ষতা। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে বলা আছে, খালি পদগুলোয় নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ব্যাপারও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বাজেট অনুযায়ী ব্যয় হয় এবং সেগুলো সঠিকভাবে মনিটরিংও করা হয়।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com