এফএনএস বিদেশ : বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স তিন হাজার ডলার ছুঁয়েছে। খবর বিবিসির। গত শুক্রবার স্বর্ণের মূল্য রেকর্ড ৩০০৪.৮৬ ডলারে পেঁৗছায়, যা ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময় স্বর্ণকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং বিনিয়োগকারীরা সাধারণত ঝুঁকির সময় স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়েন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ববাজারকে অস্থির করে তুলেছে এবং এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ও ভোক্তাদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের ফলে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা বেড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের দিকে ধাবিত করছে। শুল্ক আরোপের ফলে ব্যবসায়ীরা বাড়তি ব্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের পণ্য কেনার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করছে। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আমদানি করা যেকোনো অ্যালকোহল পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।এটি ছিল ইইউ—এর পক্ষ থেকে আমেরিকান হুইস্কি আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়া, যা ট্রাম্পের সব দেশ থেকে আমদানি করা স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর দেওয়া শুল্কের জবাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ ছাড়া, মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনা পণ্যের ওপরও শুল্ক বাড়িয়ে কমপক্ষে ২০ শতাংশ করেছেন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মূল্যবান ধাতু বিশ্লেষক সুকি কুপার বলেন, “ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং চলমান শুল্ক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ শক্তিশালী রয়েছে।” হারগ্রিভস ল্যান্সডাউনের ফান্ড গবেষণা বিভাগের প্রধান ভিক্টোরিয়া হাসলার বলেন, স্বর্ণের দামের পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, “ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও সামাজিক মাধ্যমে তার মন্তব্য এবং মধ্যপ্রাচ্য ও রাশিয়া—ইউক্রেন সংঘাতের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিই স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গেছে।” দ্বিতীয় বড় কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয়কেই দায়ী করেন হাসলার। তবে এর সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ধারণ করা কঠিন। হাসলার বলেন, “সম্ভবত এর একটি বড় কারণ হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা।” তিনি আরও বলেন, “এই দুই কারণ এখনও বিদ্যমান এবং অদূর ভবিষ্যতে এগুলো হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা কম।”অর্থনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে স্বর্ণের দাম ওঠানামা করেছে। ২০০৭ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বেছে নেয়, যার ফলে এর দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। এজে বেল ইনভেস্টমেন্টের পরিচালক রাস মোল্ড বিশ্ব স্বর্ণ পরিষদের তথ্য উল্লেখ করে জানান, গত বছর বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের রিজার্ভে এক হাজার ৪৫ টন স্বর্ণ যুক্ত করেছে—এ নিয়ে টানা তিন বছর ধরে এক হাজার টনের বেশি স্বর্ণ কেনা হচ্ছে। মোল্ড বলেন, “আমরা এমন একটি সময়ে প্রবেশ করেছি, যখন স্বর্ণ সত্যিকার অর্থে তার উজ্জ্বলতা ফিরে পাচ্ছে।”২০১৮ সালের শেষ দিকে স্বর্ণের দাম যখন এক হাজার ২০০ ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল, তখন থেকে দাম ক্রমাগত বাড়ছে। মোল্ড জানান, কোভিড মহামারি, সরকারি বাজেট ঘাটতি এবং বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান স্বর্ণের বাজারকে চাঙ্গা করেছে। তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বগতির প্রধান কারণ নির্ধারণ করা কঠিন, বিশেষ করে যখন ট্রাম্পের শুল্ক নীতি মূল্যস্ফীতি বা স্থবির মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি করছে এবং এসব শুল্ক তার নতুন কর কমানোর পরিকল্পনার জন্য কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।”