রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন

অন্তর্বতীর্কালীন সরকারের আমলে কমেছে বিদেশী ঋণের প্রতিশ্রম্নতি ও অর্থছাড়

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

এফএনএস : বর্তমান অন্তর্বতীর্কালীন সরকারের আমলে নতুন বিদেশী ঋণের প্রতিশ্রম্নতি কমার পাশাপাশি অর্থছাড়ও কমেছে। চলতি ২০২৪—২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ২৩৫ কোটি ডলারের বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় ঋণের প্রম্নতিশ্রম্নতি এসেছে। আর গত অর্থবছরের একই সময় ৭১৭ কোটি ডলারের প্রতিশ্রম্নতি এসেছিলো। এ সময় বিদেশী ঋণগ্রহণ নিয়ে ৮টি ও অনুদানের বিষয়ে ৩১টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। তার মধ্যে বিশ^ব্যাংকের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ৯৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রম্নতি এসেছে। তারপরই এডিবি সবচেয়ে বেশি ৭০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। আর ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের কাছ থেকে ৪৫ কোটি এবং এশিয়া ও জেইসির কাছ থেকে ১৬ কোটি ডলারের প্রতিশ্রম্নতি এসেছে। পাশাপাশি প্রতিশ্রম্নত বিদেশী ঋণের অর্থছাড়ও কমেছে। সাত মাসে ৩৯৪ কোটি ডলারের বিদেশী ঋণের অর্থছাড় হয়েছে। আর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ৪৪০ কোটি ডলার। এই সময়ে বিদেশী ঋণের অর্থছাড় ৪৬ কোটি ডলার বা প্রায় ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ ১১০ কোটি ডলার। বিশ^ব্যাংক ছাড় করেছে ৮৭ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের কাছ থেকে এসেছে ৭৬ কোটি ডলার। তবে চীনের কাছ থেকে এ সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কোনো অর্থছাড় হয়নি। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ৬৯ কোটি ডলার এবং এশিয়া ও জেইসি থেকে ৪১ কোটি ডলারের ঋণ এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ইইউ ছাড়া কমেছে অন্য সব জায়গা থেকে বিদেশী ঋণের অর্থছাড়। অর্থনীতিবিদ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিদেশী ঋণের প্রতিশ্রম্নতি ও অর্থছাড় কমেছে। দেশের শিল্পোৎপাদন ও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখিতা অর্থনীতিকে বেশ চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। তাছাড়া দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা এবং আইন—শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নাজুক। তাতে নতুন করে বিনিয়োগের ভরসা পাচ্ছেন না দেশী বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিদেশী বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় দাতারাও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন করে ঋণসহায়তার প্রতিশ্রম্নতি ও অর্থছাড়ের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দাতাদের কাছ থেকে সামনের দিনগুলোয় আরো কমে আসতে পারে অর্থপ্রবাহ। সূত্র জানায়, বর্তমান অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণেই বিদেশী সহায়তা কমেছে। কারণ দেশের অর্থনীতি এক প্রকার স্থবির হয়ে আছে। অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে সংকট মোকাবেলায় ব্যস্ত রয়েছে। সংকট মোকাবেলা করতেই তারা সর্বশক্তি দিয়ে নিয়োজিত রয়েছে। এমন অবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কিংবা দীর্ঘ বা মধ্যমেয়াদি কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়নে নজর দেয়ার সুযোগ সীমিত। তবে চলমান ও স্বল্পকালীন ক্ষেত্রে বহুপক্ষীয় দাতাদের কাছ থেকে কিছু অর্থ ছাড় হতে পারে। তবে দ্বিপক্ষীয় দাতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমান অনিশ্চিত ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় দেশী বিনিয়োগকারীরাই যেখানে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী হচ্ছে না, সেখানে বিদেশীরা তো আরো বেশি সতর্ক। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামনে বিদেশীদের কাছ থেকে সহায়তার প্রতিশ্রম্নতি ও অর্থছাড় আরো কমবে। সূত্র আরো জানায়, বিদেশী ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রম্নতি ও অর্থছাড় কমলেও বিদেশী ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশী ঋণের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে ২৪২ কোটি ডলার। এর মধ্যে ১৫৫ কোটি ডলারের মূল ঋণ ও ৮৭ কোটি ডলার সুদ পরিশোধ করা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয়েছিল ১৮৬ কোটি ডলারের ঋণ। সে অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৫৬ কোটি ডলার বা ৩০ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়বে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারেরও বেশি। পর্যায়ক্রমে এ ঋণ পরিশোধের চাপ সামনের বছরগুলোয় আরো বাড়বে। কারণ গত অর্থবছরে বিদেশী ঋণের আসল পরিশোধ যে গতিতে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি গতিতে বেড়েছে সুদ বাবদ খরচ। টাকার অবমূল্যায়নের ফলে বিদেশী ঋণের সুদের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাছাড়া প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণের চাপও সামনে বাড়তে থাকবে। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণেও কমে গেছে নতুন করে সহায়তার প্রতিশ্রম্নতি। সরকার যেসব সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সেগুলোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহায়তার পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত সরকার দেশে বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ বিদেশী ঋণ নিয়েছে। ওসব প্রকল্পের অনেকগুলোই বাস্তবায়ন হয়েছে। বেশ কয়েকটির কাজ এখনো চলমান। এরই মধ্যে বাস্তবায়িত অনেক প্রকল্পের বিদেশী ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশী ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। তাতে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা ও রিজার্ভ দুটোই কঠিন চাপে রয়েছে। বর্তমান সরকারকেও বিভিন্ন ধরনের বকেয়া ও ঋণ পরিশোধের চাপ সামলাতে হচ্ছে। বাড়তি চাপ সামাল দিতে এরই মধ্যে আইএমএফ, এডিবি, বিশ^ব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে বাড়তি অর্থ চেয়েছে সরকার। যদিও শর্ত পূরণ করতে না পারায় এরই মধ্যে আইএমএফের ঋণের কিস্তির অর্থছাড় আগামী জুন পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার এডিপি বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে অর্থবছরের জুলাই—জানুয়ারি সময়ে ব্যয় হয়েছে ৫৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। আর গত জানুয়ারিতে মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ বা ৯ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। আর গত বছরের জানুয়ারিতে ব্যয় হয়েছিল মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ বা ১২ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। বর্তমানে চলতি ২০২৪—২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি থেকে কমিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশী ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৮১ হাজার কোটি টাকা। যদিও ওই পরিমাণ বিদেশী ঋণ আসবে কিনা সেটি এখনই নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com