রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা সাতক্ষীরায় খাদ্যশস্য উৎপাদনে প্রয়োজন পরিকল্পিত চাষাবাদ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার \ খাদ্যশস্য উৎপাদনের সোনালী ভান্ডার সাতক্ষীরার ভূমি। ভূমির উর্বর শক্তি সুউচ্চ সম্পন্ন তার প্রমাণ মেলে কৃষকের ঘামে, শ্রমে উৎপন্ন শস্যের সবুজ সোনালী ফসলের মাঠের দিকে তাকালে। জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় খাদ্যশস্য উৎপাদনের নিজস্ব বিশেষত্ব আছে। এক একটি উপজেলার একেকটি পণ্য গুনে, মানে অনন্য। গলদা ও বগদা চিংড়ী, ধান, চাউল, তরমুজ, ওল, খিরাই, পটল, পান, আম, শাকসবজি সহ অন্যান্য উৎপাদিত কৃষি পণ্যের একটি বিরাট অংশ জেলার গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় আন্তর্জাতিক বাজারে যাচ্ছে। এসব পণ্যের গুণগত মান ভালো হওয়ায় জাতীয় আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার পরিমাণও বেশি। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য কেনাবেচার মাধ্যমে বেশ লাভবান হচ্ছে। অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সাতক্ষীরার পণ্য একক নামে পরিচিতি, চাহিদা, কদর ও সমাদর থাকলেও যে পরিমাণ খাদ্যশস্য এ জেলা থেকে উৎপাদন হওয়ার কথা সে পরিমাণ বা আশানুরূপ খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে না বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। ব্যর্থতা কোথায়? সমস্যা সমাধানের উপায় কি? এমন সব প্রশ্ন আসতেই পারে জনমনে। এসব প্রশ্নের উত্তর মিলাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, সুধী সমাজকে সাতক্ষীরার মোট ভূমির কি পরিমান চাষাবাদে ব্যবহৃত হচ্ছে তা জানতে হবে। অবশিষ্ট জমি কোন অবস্থানে আছে? কোন জমির গুণগত মান কেমন? কোন খাদ্যশস্য ভালো উৎপাদন হবে? এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও বিশদ ব্যাখ্যার জন্য আলোচনার টেবিলে বসতে হবে প্রশাসনের বা উর্ধতন কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ ও কৃষক সমাজের নেতৃবৃন্দকে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কৃষি বিষয়ে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদ ও ভূমি ব্যবহারকে একটি পরিপাটি মার্জিত সুপরিচ্ছন্ন পরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি পতিত জমির পরিমাণ শূন্যের কোটায় আনতে পারলে জেলার মোট কৃষি জমির পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যশস্য উৎপাদনের দুয়ার প্রশস্ত হবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন পূর্বক জাতীয় আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি যোগ্য খাদ্য পণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। যা স্থানীয় ও দেশীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি বৃদ্ধিতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান আধুনিক সময়ে কৃষি নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। চলমান বোরো মৌসুমে আশার আলো দেখছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বোরো আবাদ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ—পরিচালক (শস্য) ইকবাল আহমেদ। জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯৮০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বোরো আবাদ হয়েছে সাতক্ষীরা সদরে ২৩২৮৫ হেক্টর, কলারোয় ১২৮৭০ হেক্টর, তালায় ১৯১৫৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৬১২৫ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৬৯৫৫ হেক্টর, আশশুনিতে ৯৬৯০ হেক্টর ও শ্যামনগরের ২৭১৫ হেক্টর জমিতে। জেলায় মোট বোরো আবাদ হয়েছে ৮০৭৯০ হেক্টর জমিতে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৪.১৯ টন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। বোরো মৌসুমে জেলায় মোট উৎপানের পরিমান এ হিসাব অনুযায়ী হবে ৩৩৮৫৩১.০৫ টন। বস্তুত এত কিছু প্রাপ্তির পরেও কোথাও যেন কমতি আছে। মোট কৃষি জমির কি পরিমান বোরো আবাদের আওতায় এসেছে এবং কি পরিমান জমি পতিত আছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জেলায় এখন যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমি পতিত আছে সে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাকৃতিক বৃষ্টির পানির উপর চাষাবাদ নির্ভরশীল হওয়ায় শুকনো মৌসুমে পানির অভাব ও কৃষি কাজে খরচ বেশি এবং ফসলের দাম ভালো না পাওয়ায় কৃষকরা বোরো এবং সেকেন্ড ব্লকে ধান চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে। এজন্য এসব মৌসুমে পতিত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। প্রাকৃতিক নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজস্ব জমিতে পুকুর খনন, খাস জমিগুলো খননপূর্বক জলাশয়ের মাধ্যমে পানি ব্যবহার এবং কৃষিতে সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকদেরকে এসব মৌসুমে চাষাবাদে উৎসাহিত করতে হবে। এটা সম্ভব হলে জেলার মোট ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। একই সাথে গুরুত্ব দিতে হবে কৃষি ক্ষেত্রে সুপরিকল্পিত, বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদের দিকে। সব মিলিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল হোক শস্য উৎপাদনের দুয়ার প্রশস্ত করা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com