শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

অর্থ পাচার রোধে দ্বৈত নাগরিকত্বধারী সরকারি চাকরিজীবীদের সন্ধান চলছে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫

এফএনএস : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দ্বৈত নাগরিকত্বধারী সরকারি চাকরিজীবীদের সন্ধানে নেমেছে। বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় এক হাজার দ্বৈত নাগরিকত্বধারী সরকারি চাকরিজীবীকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছে দুদক। পাশাপাশি দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা সরকারি চাকরিজীবীদের তালিকা চেয়ে দুদক চারটি দপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুদক। মূলত দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে দ্বৈত নাগরিকত্বধারী সরকারি চাকরিজীবীদের সন্ধান করা হচ্ছে। কারণ বিগত সরকারের আমলে অনেক দ্বৈত নাগরিকত্বধারী সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ লুটপাট ও পাচারের অভিযোগ উঠেছে। ফলে বাংলাদেশের আইনে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এ কারণে দেশ থেকে অর্থ পাচার ঠেকাতে এবার দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা সরকারি চাকরিজীবীদের সন্ধানে নেমেছে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত সময়ে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের সাথে যেসব সরকারি চাকরিজীবী জড়িত তাদের অনেকেরই দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ যাচাই—বাছাই করছে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট। কারণ কতিপয় দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারী তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ ব্যতীত ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ ও ব্যবহার করছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে শাস্তি অথবা আইনগত পদক্ষেপ এড়ানোর লক্ষ্যে তারা ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে ওসব দেশে অবস্থান করছেন। ওসব সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজেদের আইনি পদক্ষেপ থেকে রক্ষা করাসহ অপকর্ম ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে। ওই লক্ষ্যেই তারা বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে। তাদের এমন কার্যকলাপ সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪০ ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। সূত্র জানায়, কতিপয় সরকারি কর্মচারীদের একাধিক পাসপোর্ট নেয়ার মূল লক্ষ্যই হলো বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত তাদের অবৈধ সম্পদ গোপন করে বিদেশে পাচার করা। যা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাছাড়া ভিন্ন একটি দেশে নাগরিকত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের সরকারি চাকরির নৈতিক দায়—দায়িত্বের প্রতি তাদের অনাগ্রহ দেখা যায়। অথচ দণ্ডবিধির ২১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭—এর ২ নম্বর ধারা এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১—এর ১১০ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সব আইন অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বিভাগে কর্মরত সব কমিশন্ড অফিসার, আদালতে কর্মরত কর্মচারী ও বিচারক, সরকারি রাজস্ব খাত থেকে বেতনভুক্ত সব কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত, আধা—সরকারি বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিতে কর্মরত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা—কর্মচারী এবং বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বিবেচিত হন। এ অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়া সরকারি কর্মচারীদের পাসপোর্ট ও এতদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য সরবরাহের জন্য দুদকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দফতরে অনুরোধ জানানো হয়। এদিকে এ প্রসঙ্গে দুদকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা উচ্চতর ডিগ্রির উদ্দেশ্যে বিদেশে যান। সেখানে গিয়ে তারা দীর্ঘদিন বসবাস করে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী রেসিডেন্স কার্ড নেন। তারপর টাকা—পয়সা দিয়ে নামসর্বস্ব একটা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি কিনে দেশে এসে ছুটি বৈধ করেন। কোনো ব্যক্তির যখন বিদেশে কোনো দেশের নাগরিকত্ব থাকে তখন তার আর এই দেশের প্রতি দয়ামায়া থাকে না, থাকে না দায়বদ্ধতা। তখন তিনি দুহাতে অবৈধ টাকা হাতিয়ে তা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন। এরপর সময় সুযোগ করে বিদেশে গিয়ে আর দেশে ফেরত আসেন না। অনেকে বাংলাদেশের নাগরিকত্বও প্রত্যাহার করেন। ফলে তাদের ধরা দুরূহ হয়ে পড়ে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com