এফএনএস: আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, জনগণের তো একটা আকাঙ্ক্ষা আছে আমরা যেন বিচার করে যাই। হাজারের বেশি মানুষ জীবন দিয়েছে, ৫০-৬০ হাজার মানুষ শারীরিক ভাবে স্থায়ী ক্ষতির শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, বিচারের দাবি তো গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা। কোনো বিচার না করে নির্বাচন করলে আমরা মানুষের কাছে, নিজের কাছে জবাব দেবো কীভাবে। সুতরাং, বিচার ও সংস্কারের কাজের কারণে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়। কিন্তু আমরা বলেছি যে কোনোভাবেই জুনের বেশি যাবে না, যে যাই বলুক না কেন। প্রধান উপদেষ্টা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন জুনের থেকে পেছাবে না। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক নিয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি বলেছে- আমাদের যে সংস্কার ভাবনা, সেটা তাদের দলের অনেক পুরনো ভাবনা। ওনারা সংস্কারপন্থি দল, আমরা সম্মত হয়েছি। অবশ্যই বিএনপি সংস্কারপন্থি দল। আমাদের কথা হচ্ছে, আমাদের যে সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন আছে তাদের প্রস্তাবনার বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা বলেছে যে ২-৩ দিনের মধ্যে কমিশনের সঙ্গে তারা বৈঠকে বসবে। সংস্কারের সঙ্গে তারা ঐকমত্য পোষণ করে এবং জুলাই সনদের কাজ দ্রæত হয়ে যাবে এটাও তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি আরও বলেন, একটা বিষয় নিয়ে দ্বিমত হতে পারে যে ওনারা বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে ভালো হয়। আমরা বলেছি, আমাদের কথাবার্তার মধ্যে কিছু অস্পষ্ট থাকলে, কোন উপদেষ্টার কথা কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি করে আমরা বলেছি, যে যাই বলুক না কেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বারবার বলেছেন, সেটাই আমাদের অবস্থান। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন। আজকে আলোচনায় আমরা কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট করেছি। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে, দেরি করে মে বা জুন মাসে নির্বাচন করবো, সেটা না। ডিসেম্বর থেকে জুন অর্থ হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ক্ষমতা একটু ভোগ করার জন্য, কিংবা অকারণে আমরা এক মাস, দুই মাস ক্ষমতায় বেশি থাকলাম, বিষয়টা সেটা মোটেও না। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এখন ওনারা জানতে চেয়েছেন সংস্কার যদি হয়েও যায় তাহলে দেরি করার কী আছে। আমরা বুঝিয়েছি যে জুলাই সনদ প্রণয়ন হলেও প্রয়োজনীয় আইনগত নীতিগত ব্যবস্থা নিতে সময় লাগে। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলেছি, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন ২৩ বার ড্রাফট করা হয়েছে, মতামত নেওয়ার জন্য। জুলাই সনদ কয়দিনে হয়ে যাবে, সেটা তো আমরা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনার বিচারে কোনো প্রকার বিলম্ব হচ্ছে না। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, শেখ হাসিনার সরকার জামায়াত নেতাদের খুবই প্রশ্নবিদ্ধ একটা বিচার করেছেন এবং ওই বিচারে সময় লেগেছে গড়ে আড়াই বছর। আসিফ নজরুল বলেন, আপনাদের একটা পারস্পেক্টিভে দেখতে হবে। যেই ভয়াবহ এবং ব্যাপক অপরাধ ঘটেছে, এটার উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য আমরা প্রসিকিউশন এবং তদন্তকারী দল আপনারা ওখানে গিয়ে একটু খবর নিয়ে দেখেন, উনারা কী পরিমাণ পরিশ্রম করেন। সরকারের কাছে যা যা চাওয়া হয়, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উনাদের সহায়তা করি। এই ট্রাইব্যুনাল কিন্তু সরকার আসার সঙ্গে সঙ্গে গঠিত হয় নাই, আমাদের বিল্ডিংও ছিল না, বিচারক ছিল না, নতুন বিচারক নিয়োগ করতে হয়েছে, প্রসিকিউটর নিয়োগ করতে হয়েছে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, কিন্তু আমরা যখন যুক্তিগুলো দিয়েছি তখন উনারা আর কিছু বলেন নাই। আমরা ধরে নিয়েছি যে উনারা আমাদের কথা বুঝতে পেরেছেন। ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে দেশ অস্থিতিশীল হতে পারে বিএনপি’র এমন আশঙ্কার প্রেক্ষিতে আসিফ নজরুল বলেন, উনারা এসব আশঙ্কার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, এসব আশঙ্কার কোনো কারণ নাই। আমরা সতর্ক আছি, আমরা অত্যন্ত সম্মানজনকভাবে উনাদের মতামত বিবেচনায় নিয়েছি।