শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

গাজায় আটকা পড়েছে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ ইসরাইলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের \ ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর গাজায় বাস্তুচ্যুত ৪২০,০০০ ফিলিস্তিনি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

দৃষ্টিপাত ডেস্ক \ হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল-হাইয়া টেলিভিশনে এক বিবৃতিতে বলেন,‘ বেনিয়াামিন নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক এজেন্ডার আড়াল হিসেবে আংশিক চুক্তি কার্যকর করছেন। আমরা এই নীতিতে জড়িত হব না।’ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বৃহস্পতিবার ইসরাইলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত দিয়েছে এবং ১৮ মাস ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি গঠনমূলক চুক্তির আহŸান জানিয়েছে। হামাসের প্রধান আলোচক তার এক বক্তব্যে এ কথা জানিয়েছেন। হামাসের একটি সূত্র ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইলের সর্বশেষ প্রস্তাবের বিষয়ে তারা বৃহস্পতিবার মধ্যস্থতাকারীদের কাছে লিখিত প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছে। হামাস এতে ইসরাইলি কারাগার থেকে এক হাজার ২৩১ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি এবং গাজায় ২ মার্চ থেকে সম্পূর্ণ অবরূদ্ধ থাকা মানবিক সহায়তা প্রবেশের আহŸান জানিয়েছে। বাসসের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইসরাইল তাদের প্রস্তাবে হামাসের হাতে আটক ১০ জন পণবন্দীর মুক্তি চায় এবং যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহŸান জানায়। তবে নিরস্ত্রীকরণের দাবিটি হামাস ইতোমধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল-হাইয়া টেলিভিশনে এক বিবৃতিতে বলেন,‘ বেনিয়াামিন নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক এজেন্ডার আড়াল হিসেবে আংশিক চুক্তি কার‌্যকর করছেন। আমরা এই নীতিতে জড়িত হব না।’ তিনি বলেন, হামাস যুদ্ধ বন্ধ, গাজা উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার, ভূখÐে পুনর্গঠন শুরু এবং বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে স্থায়ী চুক্তি চায়।’ ইসরাইল প্রথম দফার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে অন্যদিকে হামাস জোর দিয়েছিল দ্বিতীয় পর‌্যায়ের জন্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হোক, যেমনটি জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন উল্লেখ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারিতে কার‌্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় পুনরায় সামরিক অভিযান শুরু করেছে। অপরদিকে জাতিসঙ্ঘ মুখপাত্র আরো বলেন, যুদ্ধের ফলে পানি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কূপ, পাম্পিং স্টেশন ও পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগারসহ প্রায় ৯০ শতাংশ পানি সম্পদ হয় ধ্বংস হয়ে গেছে অথবা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। তুর্কী বার্তাসংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গাজায় চলমান যুদ্ধ ও ত্রাণ সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে মানসিক চাপের মাত্রা বেড়েছে- বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। এছাড়াও দিন দিন মানসিক স্বাস্থ্যগত চাহিদাও বাড়ছে। মানবিক-বিষয়ক সমন্বয় অফিসের (ওসিএইচএ) উদ্ধৃতি দিয়ে ডুজারিক বলেন, ২ মার্চ ইসরাইল গাজায় মানবিক সাহায্যের প্রবেশের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে মানবিক সরবরাহ প্রায় হ্রাস পাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ মুখপাত্র আরো বলেন, যুদ্ধের ফলে পানি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কূপ, পাম্পিং স্টেশন ও পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগারসহ প্রায় ৯০ শতাংশ পানি সম্পদ হয় ধ্বংস হয়ে গেছে অথবা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডুজারিক জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে স্পষ্ট বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, চিকিৎসা সরবরাহ এবং জনস্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করা এবং যদি তা সরবরাহ করা না হয় তখন মানবিক ত্রাণ সরবরাহ করা।’ ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, উত্তরে ইসরাইলি অভিযান অব্যাহত থাকায় হাজার হাজার বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং বাড়ি ফিরতে পারছেন না। ইসরাইলি ভূখÐে হামাস ২০২৩ সালের অক্টোবরে আকস্মিক হামলা চালায়। এরপর পরই ইসরাইল গাজায় ব্যাপকহারে সামরিক আক্রমণ শুরু করে। ১৮ মাস ধরে চলমান ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংস হামলায় এখন পর‌্যন্ত ৫১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে আরো প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে আরো প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসঙ্ঘের সংস্থা ইউএনআরডবিøউএ এ তথ্য জানিয়েছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) আনাদোলু নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ মার্চ ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের পর থেকে গাজায় ৪ লাখ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি নতুন করে বাস্তুচ্যুত করেছে। এক বিবৃতিতে ইউএনআরডবিøউএ সতর্ক করে বলেছে, ‘২০২৫ সালের ২ মার্চ অর্থাৎ ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ অবরোধ আরোপ করার সময় থেকে গাজা উপত্যকায় কোনো প্রকারের মানবিক সাহায্য ও সরবরাহ প্রবেশ করেনি।’ বিবৃতিতে সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, এ সংখ্যা ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় জারি করা আদেশের চেয়ে তিনগুণ বেশি। এটি উল্লেখ করেছে, ১৮ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কমপক্ষে ২০টি বাস্তুচ্যুতি আদেশ জারি করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এ কারণে গাজা উপত্যকার প্রায় ৬৯ শতাংশ ফিলিস্তিনি সক্রিয় বাস্তুচ্যুতি আদেশের আওতায় রয়েছে। উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে। জাতিসঙ্ঘের হিসাব মতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর‌্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসাথে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিসরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)। ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে। সূত্র : আনাদোলু

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com