বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

৪৩ বছর পর জেদ্দায় পা রাখলেন কোনো ভারতীয় সরকারপ্রধান

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

এফএনএস বিদেশ : দুই দিনের সফরে সৌদি আরবের জেদ্দায় পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সফরের মাধ্যমে ৪৩ বছর পর প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জেদ্দায় সফর করলেন। এর আগে ১৯৮২ সালে জেদ্দা সফর করেছিলেন তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। জেদ্দা দীর্ঘদিন ধরে ওমরা ও হজ্জের জন্য আগত মুসলিমদের জন্য বন্দর হিসেবে কাজ করে আসছে। ইসলামের দুটি পবিত্রতম শহর মক্কা ও মদিনার প্রবেশদ্বার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। জেদ্দা হেজাজ অঞ্চলে লোহিত সাগরের উপক‚লে অবস্থিত দেশটির বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এটি রিয়াদের পরে সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। সাধারণত ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা সৌদি সফর করলে রিয়াদে যান। এর আগে ২০১৬ সালে এবং ২০১৯ সালে মোদীও সেখানেই গিয়েছেন। দীর্ঘ দিন পর দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রী জেদ্দায় গেলেন। তাই এই সফরকে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এমন একটা সময় সৌদি আরবে গেলেন, যখন ভারতে ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) দেশজুড়ে বিক্ষোভ করছে।
হজ কোটা, হজযাত্রীদের সহায়তা
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে মোদির দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বার্ষিক হজের জন্য ভারতের কোটার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য ভারতীয় হজযাত্রীদের জন্য মসৃণ সমন্বয় এবং বর্ধিত সমর্থন নিশ্চিত করা। জানা গেছে, ২০১৪ সালে ভারতীয়দের জন্য হজ কোটা ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ২০ জন, যা ২০২৫ সালে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫ জন। তবে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২২ হাজার ৫১৮ জন হজযাত্রী হজে যাবেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে বাকি প্রায় ৪২ হাজার হজযাত্রীর মক্কায় যাওয়ার সম্ভাবনা কম। সৌদি আরবে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সুহেল আজাজ খান জেদ্দার দ্বৈত গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য কেন্দ্র সৌদি। এ ছাড়া মক্কার প্রবেশদ্বারের কারণে দেশটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হজ আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং ভারত সরকার একটি নির্বিঘœ হজযাত্রার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
এদিকে জেদ্দায় পৌঁছেই আরব নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরবকে ‘বিশ্বস্ত বন্ধু ও কৌশলগত মিত্র’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা সীমাহীন। অনিশ্চয়তায় ভরা বিশ্বে আমাদের সম্পর্ক এক স্থিতিশীলতার স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
ছয়টি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত
উচ্চ-পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, মোদির সফরের সময় ভারত ও সৌদি আরব কমপক্ষে ছয়টি মূল সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করবে। এরমধ্যে রয়েছে মহাকাশ অনুসন্ধান, শক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সংস্কৃতি এবং উন্নত প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো। তবে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, এক ডজনেরও বেশি চুক্তির বিষয় ভাবা, হচ্ছে যার মধ্যে কিছু বিষয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি না থাকলেও সরকারি পর্যায়ে সই হতে পারে। সৌদি আরব বর্তমানে ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। কৃষি, সার, জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনসহ উদীয়মান খাতগুলোতে যৌথ উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি। সৌদিতে অবস্থানরত ২৭ লাখ ভারতীয়কে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ‘বন্ধনের শক্তি’ বলে অভিহিত করেন মোদি। এ জন্য সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে মোদি বলেন, তার প্রতিটি সাক্ষাতে আমি গভীরভাবে মুগ্ধ হয়েছি। তার দূরদর্শী চিন্তাভাবনা, প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার অনন্য। সূত্র: ইকোনমিক টাইমস, এনডিটিভি, আরব নিউজ, মিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com