এফএনএস: করোনার চেয়ে দেশে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি মানুষের মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। গবেষণায় দেখে গেছে, দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ হয় অসংক্রামক রোগে। এদিকে গুরুত্ব না দিলে ২০৪০ সালে এই হার ৮০ শতাংশে উঠে যেতে পারে। সংক্রামকের চেয়ে অসংক্রামক রোগে এত বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও অসংক্রামক রোগের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম পর্বে যোগ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ঢাকার প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান হচ্ছে। ২৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ সম্মেলন শেষ হবে ২৮ জানুয়ারি। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনের প্রথম পর্বে স্বাস্থ্য অর্থ ইউনিটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, কোভিডে সারা বিশ্ব এই মুহূর্তে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমাদের দেশে কোভিডে যে মৃত্যু, অসংক্রামক কোনও কোনও রোগে মৃত্যু তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। শুধু ধুমপান-জনিত কারণে দেশে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে সাড়ে ৩০০ মানুষের। ক্যানসার, টিবি, হার্ট ডিজিস সবগুলোই অসংক্রামক রোগ এবং এগুলোর যে মৃত্যুর হার, প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে তা কোভিডের তুলনায় ৫ গুণ। কিন্তু কেন যেন আমরা শুধু সংক্রমক রোগের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিভিন্ন গবেষণার তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দেশে এই মুহূর্তে ৮৪ লাখ মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। সবাইকে পরীক্ষা করলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাদের শুধু ইনসুলিনের জন্য বছরে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। শুধু ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অন্য বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি নেই জানিয়ে শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, করোনার টিকার জন্য এবার সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি তহবিল আছে, সেখান থেকেও বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে আমরা যদি হিসাব করি, তাহলে ১০ ভাগের কাছাকাছি হবে। একটি গবেষণার বরাত দিয়ে এই বিষেজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৬৭.৫ ভাগ অর্থ জনগণ পকেট থেকে ব্যয় করে। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। এখানেও একটি হিসাব বারবার বাদ পড়ে যায়। যারা সরকারি কর্মচারী রয়েছেন, তাদের জন্য সরকার প্রতিমাসে হেলথ অ্যালাউন্স দিয়ে থাকে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। এটির পরিমাণও ৬ হাজার কোটি টাকা। এটি কিন্তু কাউন্টে আনা হয় না। সবকিছু কাউন্টে আনলে হয়তো সরকারের অংশগ্রহণ আরও বেশি হতো। তিনি বলেন, থোক বরাদ্দ দিয়ে সরকার চলমান অর্থবছরে কোভিডের কারণে যা খচর করেছে, সেটি কাউন্ট করলে সরকারের অংশগ্রহণ অনেক বেশি হবে। অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও কার্পণ্য নেই। যা বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে, আমারা তা সবসময় সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি না। গবেষণার বরাত দিয়ে শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ আরও বলেন, বাংলাদেশে যত মৃত্যু হয়, তার ৭০ ভাগই অসংক্রমামক রোগে। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। ২০৪০ সালে এই হার হয়তো ৮০ শতাংশে উঠে যাবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ইন্টান্যাশনাল সোসাইটি ফর আরবান হেলথ (আইএসইউএইচ) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জো আইভি বাফর্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি টিম লিডার (ব্যাংলাদেশ) সাধনা ভাগওয়াত, ওয়ার্ড ওরবেস্টি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জন উইলডিং, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্ট্রর ডা. মুনির আহমেদ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল রিসার্স সেন্টারের রিসার্স প্রধান অধ্যাপক ডা. রেদওনুর রহমানসহ অন্যরা।