বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

কুয়েটে ৩২ শিক্ষার্থীর অনশন, একজন অসুস্থ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

এফএনএস: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন গতকাল মঙ্গলবার অব্যাহত ছিল। গত সোমবার শুরু হওয়া এ অনশন গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টায়ও চলমান ছিল। এ সময়ের মধ্যে না খেয়ে থাকা ৩২ শিক্ষার্থী ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। একজন শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে গত সোমবার রাতেই অনশন থেকে সরে যান। অন্য এক শিক্ষার্থীকে তার অভিভাবক এসে অনশন থেকে নিয়ে গেছেন। এদিকে ছাত্রদের অনশন ভাঙাতে তৎপর রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দফতর। উল্লেখ, পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৩২ শিক্ষার্থী গত সোমবার পৌনে ৪টার দিকে আমরণ অনশনে অংশ নেন। এ সময় সেখান জড়ো হওয়া অন্য শিক্ষার্থীরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের চারদিকে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পক্ষ থেকে গত সোমবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের আমরণ কর্মসূচি থেকেই ছাত্রদের আলোচনায় বসানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। গত সোমবার সকালে তারা আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহŸান জানান। দুপুর আড়াইটায় ছাত্র কল্যাণ পরিচালক, সহকারী পরিচালক, ডেপুটি পরিচালকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পূর্বনির্ধারিত অনশনস্থল স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় অবস্থান নেন। এরপর বিকাল পৌনে ৪টায় অনশন শুরু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে সরে এসে আলোচনা টেবিলে বসার আহŸান জানিয়ে একাধিক শিক্ষক বক্তৃতা করেন। এ সময় শিক্ষকরা তাদেরকে জুস পান করার অনুরোধ জানিয়ে অনশন থেকে সরে আসার আহŸান জানান। এভাবে টানা আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও শিক্ষার্থীদের নমনীয় করতে না পেরে ছাত্র কল্যাণ দফতরের পরিচালকসহ শিক্ষকরা সেখান থেকে চলে যান। যাওয়ার সময় তারা বলে যান, আমরা আবারও তোমাদের কাছে আসবো আলোচনার সুযোগ সব সময় রয়েছে। অনশনরত সিইসি বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, আমাদের এক দফা, এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ। আমাদের দাবি যেদিন মেনে নেওয়া হবে, সেদিন আমাদের অনশন শেষ হবে। আমরা ইন্টেরিম দিকে তাকিয়ে আছি, তারা কখন আমাদের দিকে তাকাবে? কুয়েটে গত দুই মাস ধরে যতটুকু আন্দোলন হয়েছে, শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমরা রেল না রাস্তা বøকেড করছি? এমনকি আমরা যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে গেছি, তখন পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিলাম। শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থাকার জন্যই কি ইন্টেরিম আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না? তিনি বলেন, শিক্ষকদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ যে আমাদের কাছে এসেছেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওনারা যখন আসছে তার আগে আমাদের দমানোর জন্য আমাদের প্রতি মামলা করা হয়েছে, এমনকি আমাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারের পরে আবার নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আমাদেরকে দমানো যায়। শুধু এই তদন্ত কমিটি নয়, গত সোমবার আবার শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছিল, যাতে আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য বসতে না পারি। এত হামলা, এত বহিষ্কারের পরে ছাত্ররা আর তাদের দাবি থেকে ফেরত যেতে চায় না। আইইএম বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী উপল বলেন, আন্দোলন তো শুরু হয়েছে দুই মাস ধরে। ৬ দফার যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু সেটা মানা হয়নি। এরপর আমরা ভিসিকে বর্জন করি। আমরা ঢাকায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের স্মারকলিপি দিয়ে আসি। এ কারণে যে ইন্টেরিম আমাদের দিকে তাকাবে। কিন্তু দুই মাস হয়ে গেলো ইন্টেরিম আমাদের দিকে তাকায়নি। তিনি বলেন, এই সরকার জুলাইয়ের ও ছাত্রদের রক্তের ওপর দিয়ে আসলো। অথচ এই সরকার ছাত্রদের দিকে তাকালো না। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ তৌফিক আহমেদ বলেন, আলোচনার সময় এখন আর নেই। আমরা স্যারদের সঙ্গে বসার অনেক চেষ্টা করেছি। আমরা বলেছি সমঝোতার সুযোগ আছে, হলগুলো খুলে দিন। তাহলে হয়তো তখন সমঝোতা হয়ে যেত। আর যে পাঁচটা দাবি অন্তত এই পাঁচটা দাবি যদি মানতো। আজকে তারা আমাদের সঙ্গে বসছেন, এই বসাটা আরও আগে বসলে সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু এখন যখন আমরা হার্ড লাইনে চলে এসেছি, এখন আর কথা বলার সুযোগ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com