এফএনএস আন্তজার্তিক ডেস্ক: কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। হামলার জন্য প্রতিবেশী পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও আকাশসীমা বন্ধসহ হুঁশিয়ারি দিয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে, ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ইতিহাসের অন্যতম নিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠকের পর নেয়া পাঁচ দফা সিদ্ধান্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
০১. সব ধরনের পাকিস্তানি ভিসা বাতিল: পাকিস্তানের নাগরিকদের দেওয়া সব ভিসা বাতিল করা হয়েছে। মেডিকেল ভিসা ছাড়া অন্যসব ভিসা ২৭ এপ্রিল থেকে কার্যকরভাবে বাতিল।
০২. সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত: ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক চুক্তি স্থগিত করে ভারত পানি সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।
০৩. আটারি—ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ: দুটি দেশের সবচেয়ে বড় সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
০৪. সামরিক উপদেষ্টা বহিষ্কার: দিল্লি ও ইসলামাবাদে নিযুক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
০৫. দূতাবাস কর্মী সংখ্যা হ্রাস: দুই দেশের দূতাবাসে কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০—এ নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পাকিস্তান “পরোক্ষভাবে”এই হামলার সঙ্গে যুক্ত, যদিও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্য কোনো প্রমাণ দেয়নি ভারত।
ভারতের এসব সিদ্ধান্তের জবাবে পাকিস্তানও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
একইসঙ্গে ইসলামাবাদ জানায়, ভারতের সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত ‘একতরফা ও অগ্রহণযোগ্য’, যা যুদ্ধ ঘোষণা বলেও গণ্য হতে পারে। পাকিস্তান স্পষ্ট করে বলে, “পানির প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।”
ভারতের গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, হামলার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহভাজন তিনজন জঙ্গির মধ্যে দুইজন পাকিস্তানি নাগরিক। তবে দিল্লি এখনও কোনো বিস্তারিত প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
পাকিস্তান এই অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসলামাবাদের মতে, ভারতীয় সিদ্ধান্তগুলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে শুধু নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তাকেই ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের উত্তেজনা অনেকবারই তুঙ্গে উঠেছে, তবে এই মুহূর্তে যে হারে কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং পাল্টা হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে, তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়েও বিপজ্জনক। সামরিক ও কূটনৈতিক দুই অঙ্গনে এই উত্তেজনা দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।